
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গড়িয়েছে চতুর্থ মাসে। এখনো থামছে না দু’পক্ষের লড়াই। এ পর্যন্ত বহু মানুষ হতাহত হয়েছে দেশটিতে। যুদ্ধের কারণে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন অনেকেই। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এক কোটি ৩০ লাখের বেশি ইউক্রেনীয় তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তর ঘটেছে আরও ৮০ লাখ মানুষের। তবে কয়েক মাসের ব্যবধানে অনেকেই আবার বাড়িতে ফিরে গেছেন, বিশেষ করে রাজধানী কিয়েভে।
জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ৯ জুন পর্যন্ত ইউরোপে ৪৯ লাখ শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩২ লাখের বেশি অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করেছেন। জানা গেছে, পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন ১১ লাখ ৫২ হাজার ৩৬৪ জন ইউক্রেনীয়। রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন ১১ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৩ জন। রোমানিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন ৮৯ হাজার ৯৭৪ জন। মলদোভায় ৮৬ হাজার ২৫৪ জন আশ্রয় নিয়েছেন। স্লোভাকিয়ায় ৭৭ হাজার ৩৩০ জন এবং বেলারুশে ৮ হাজার ২৭ জন আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যরা তাদের নিজস্ব গন্তব্যে চলে গেছেন, বিশেষ করে যারা পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ায় প্রবেশ করেছেন। এই দেশগুলোর অন্যান্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত খোলা রয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে এখন জার্মানিতে ৭ লাখ ৮০ হাজার ইউক্রেনীয় রয়েছেন। চেক প্রজাতন্ত্রে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৩২ জন রয়েছেন। তুরস্কে রয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ইউক্রেনীয়।
কিছু ইউক্রেনীয় রুশপন্থী অঞ্চল লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক দিয়ে রাশিয়ায় প্রবেশ করেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন যে তার বাহিনী মারিউপোল থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার বেসামরিক নাগরিককে সরিয়ে নিতে সাহায্য করেছে এবং কাউকে বাধ্য করা হয়নি। তবে স্বেচ্ছাসেবক দলগুলো বলছে যে তারা শত শত ইউক্রেনীয়কে রাশিয়া ছেড়ে যেতে সাহায্য করেছে।
ইইউ ইউক্রেনীয়দের বসবাসের জন্য অনুমতি দিয়েছে এবং ২৭টি সদস্য দেশ তিন বছর পর্যন্ত তাদেরকে সহায়তা করবে। শরণার্থীদের আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয় যদি তারা বন্ধু বা আত্মীয়দের সাথে থাকতে না পারেন। তাদের খাবার ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় এবং পরবর্তী ভ্রমণের তথ্যও দেওয়া হয়। তারা সামাজিক কল্যাণ ভাতা, আবাসন, চিকিৎসা ও স্কুলে যাওয়ার অনুমতিও পাচ্ছেন।
সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে পোল্যান্ড। মলদোভা যেখানে জনসংখ্যারভিত্তিতে হিসাব করলে শরণার্থীদের ঘনত্ব বেশি। দেশ দুটি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, ৯ জুন পর্যন্ত, ইউক্রেনে ২৩ লাখ শরণার্থী ফিরে গেছেন। তবে তাদের আলাদা করে হিসাব করা হয়নি। গত মে মাসে, কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন যে শহরের জনসংখ্যা যুদ্ধ-পূর্ব অবস্থানের ন্যায় দুই-তৃতীয়াংশে ফিরে এসেছে।
ইউক্রেনের অভ্যন্তরেও স্থানান্তর ঘটে বহু মানুষের। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (আইওএম) বলছে, ৮০ লাখ লোক অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তরিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৩ শতাংশ খারকিভ অঞ্চল থেকে, কিয়েভের ২০ শতাংশ এবং ১৭ শতাংশ দোনেৎস্ক থেকে। ২৭ শতাংশ মানুষ বাড়ি ছেড়েছেন ক্ষয়ক্ষতির জন্য। অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তরিত হওয়া বেশির ভাগই নারী। তাদের মধ্যে অন্তঃসত্তা নারী ও ছোট শিশুরাও আছে।
সূত্র: বিবিসি
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন