সংকটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস | Daily Chandni Bazar সংকটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর, ২০২২ ১৫:৩৬
সংকটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস
অনলাইন ডেস্ক

সংকটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস

ট্রাসোনোমিকসের মৃত্যু হয়েছে। কর ছাড়ের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচনের আগে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছিলেন ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। করপোরেট কর বাড়ানোর পদক্ষেপ বাতিলের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শুরুটাও সেভাবে করেছিলেন লিজ ট্রাস। তিনি এখনও জোর দিয়ে বলছেন ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোই তার লক্ষ্য। কিন্তু তার কার্যালয়ের ফোকাস এখন ব্রিটেনের বন্ড মার্কেটের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা।

ট্যাক্স ইস্যুকে কেন্দ্র করে টানাপোড়েন তৈরি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে কোয়াসি কোয়ার্টেংকে সরিয়ে দিয়েছেন গত ১৪ অক্টোবর। তার স্থলাভিষিক্ত হন জেরেমি হান্ট, যিনি একজন ঝানু রাজনীতিবিদ এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। চলতি বছর নিয়োগ পাওয়া যুক্তরাজ্যের চতুর্থ অর্থমন্ত্রী হলেন তিনি।

পরে, এক সংবাদ সম্মেলনে লিজ ট্রাস ঘোষণা করেন যে, তিনি করপোরেশন ট্যাক্সের পরিকল্পিত বৃদ্ধি পুনর্বহাল করবেন। এই পদক্ষেপ ব্রিটিশ সরকারের ঋণের উভয় গ্রহীতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। ২৩ সেপ্টেম্বর, কোয়াসি কোয়ার্টেংয়ের বাজেট পরিকল্পনায় ভেসতে যায় সেটি এবং তার নিজের দলের লোকরাই সমালোচনায় ফেটে পড়েন। তিনি এখনও উভয় গ্রুপকে আশ্বস্ত করার জন্য যথেষ্ট কাজ করেননি।

ট্রাসের বৈপরীত সিদ্ধান্ত অপমানজনক। করপোরেশন ট্যাক্সের পরিকল্পিত বৃদ্ধি বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে প্রচারে নেমেছিলেন।

চলতি বছর মার্চের বাজেটে তৎকালীন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এই কর ২০২৩ সালের এপ্রিলে ১৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তার যুক্তি ছিল, কোভিড মহামারিতে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিতে সরকার কোম্পানিগুলোকে শত শত কোটি পাউন্ড দিয়ে সহায়তা করেছে। ফলে তাদের কাছ থেকে এই বাড়তি কর চাওয়া অন্যায় কিছু নয়। কিন্তু সুনাকের এই সিদ্ধান্তই বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন লিজ ট্রাস।

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) তিনি সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসায় সুনাকের সিদ্ধান্তই বহাল থাকলো। যারা দেড় লাখ ইউরো বা এর বেশি আয় করেন তাদের ওপর কর ৪৫ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন লিজ ট্রাসের অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেং।

তিনি এটি স্বীকার করেন যে বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে আরও বেশি এবং দ্রুত নেওয়া হয়েছিল এ সিদ্ধান্ত। এখন তিনি বলছেন যে তার অগ্রাধিকার তার ঋণদাতাদের কাছে ব্রিটেনের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা। মাঝারি মেয়াদে জিডিপির শতাংশ হিসাবে ঋণ কমছে তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি ‘যা কিছু প্রয়োজন’ তা করবেন।

ফলস্বরূপ, এপ্রিল থেকে আড়াই লাখ ইউরো মুনাফাসহ যাদের আয় বেশি তাদের কর ১৯ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে, যা ফ্রান্স এবং জার্মানির সঙ্গে তুলনীয় একটি স্তর। এটি রাজকোষে ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ১৯ বিলিয়ন পাউন্ড জমা করবে।

তবুও এটি সরকারকে একটি আর্থিক গর্ত থেকে বের করে আনার জন্য অপর্যাপ্ত যেটি মূলত নিজেরাই খনন করেছে তারা। এই বিবৃতির আগে একটি থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ফিসকাল স্টাডিজের কার্ল এমারসন ও ইসাবেল স্টকটন বলেছেন, ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য ২০২৬-২৭ সালে প্রায় ৬২ বিলিয়ন পাউন্ড কমতে হবে।

চ্যান্সেলর হিসেবে কোয়ার্টেংকে তার ৩৯ দিনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে একটি পাবলিক চিঠিতে ট্রাস লেখেন যে তিনি পরিকল্পনা আইনে কাঠামোগত সংস্কার করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই সংস্কারগুলো কেবল কাগজে-কলমে বিদ্যমান এবং সংসদের মাধ্যমে একটি কঠিন যুদ্ধের মুখোমুখি। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশের জন্য একই দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রবৃদ্ধির জন্য একই দৃঢ় প্রত্যয় শেয়ার করি’। তিনি লেখেন, এখনও তার প্রত্যয় বাকি।

ট্রাস বলেছেন যে, ‘ব্যয় আগের পরিকল্পনার চেয়ে কম দ্রুত বৃদ্ধি পাবে’। কিন্তু সরকার কোথায় সরকারি ব্যয় কমাতে পারে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার অর্থ হলো বিনিয়োগকারীরা এখনও আশ্বস্ত নয়। বিনিয়োগকারীদের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে হান্টের কাছ থেকে শোনার জন্য যে তিনি কীভাবে অর্থযোগ করার পরিকল্পনা করছেন।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন