এমন জয়ের পর কি উৎসব করতে পারবে টাইগাররা? | Daily Chandni Bazar এমন জয়ের পর কি উৎসব করতে পারবে টাইগাররা? | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ২৩:১৪
এমন জয়ের পর কি উৎসব করতে পারবে টাইগাররা?
অনলাইন ডেস্ক

এমন জয়ের পর কি উৎসব করতে পারবে টাইগাররা?

মূলপর্বে নয়। তবে ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে, ডাচদের বিপক্ষে এর আগেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম বা বাছাই পর্বে জয়ের রেকর্ড ছিল টাইগারদের। জেনে অবাক হবেন, ৬ বছর আগে ২০১৬ সালে ভারতের ধর্মশালায় প্রথমপর্বে ৮ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেখানে আজ ১৪৪ রানের পুঁজি নিয়ে ৯ রানে জিতেছে সাকিব বাহিনী।

এ জয় অবশ্যই স্বস্তির। দীর্ঘদিন হারের বৃত্তে আটকে অবশেষে বেরিয়ে আসা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ জয়ের পর কি উৎসব করতে পারবে সাকিবের দল? আজকের এই পারফরমেন্স কতটা সন্তোষজনক? এমন খেলে বড় দলের বিপক্ষে কিংবা নিদেনপক্ষে জিম্বাবুয়েকেই কি হারানো সম্ভব?

তবে পুরো খেলায় দুটি জায়গায় উন্নতির ছাপ আছে। প্রথমত, আজ ওপেনিং জুটি শুরুর পর পরই ভাঙেনি। নাজমুল হোসেন শান্ত আর সৌম্য সরকার ৫.১ ওভারে প্রথম উইকেটে তুলে দিয়েছিলেন ৪৩ রান।

যেটা গত বিশ্বকাপের প্রথমপর্বে ওমানের সঙ্গে ম্যাচের (৪০ রান) পর উদ্বোধনী জুটিতে সবচেয়ে বেশি রান। আর দুই পেসার তাসকিন আহমেদ (৪/২৫) ও হাসান মাহমুদের বোলিংও ( ২/১৫) এ ম্যাচের বড় প্রাপ্তি।

কাজের কাজ করে দিয়েছেন দুই দ্রুতগতির বোলার তাসকিন আহমেদ আর হাসান মাহমুদ। তাদের বলেই ধরা দিয়েছে জয়। এ দুই পেসার দেখিয়ে দিয়েছেন, পেস বোলিং দিয়েও জেতা সম্ভব।

সত্যি বলতে, তাসকিন আর হাসান মাহমুদের বোলিংটাই এ ম্যাচে ভক্ত ও সমর্থকদের একমাত্র ভালো লাগা। টিম বাংলাদেশের সামগ্রিক পারফরম্যান্স ভক্ত ও সমর্থকদের মন ভরাতে পারেনি। ভরবে কী করে? একজন ব্যাটারও পঞ্চাশের ঘরে পা রাখতে পারেননি।

স্কোর লাইন দেড়শো’ও হয়নি। দল সাজানোয়ও ছিল না দূরদর্শিতার ছোঁয়া। একাদশে কোনো পঞ্চম বোলারই ছিল না। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে খেলা, বাড়তি স্পিনার নিয়ে মাঠে নামার কথা। কিন্তু অবাক ব্যাপার, সাকিবের সঙ্গে কোনো স্পেশালিষ্ট স্পিনার মানে মিরাজ-নাসুমের কাউকে রাখা হয়নি। সৌম্য সরকার আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে দিয়ে ৪ ওভার করানোর পরিকল্পনায় সাজানো হয়েছিল একাদশ ।

সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এ ম্যাচের একটিই অগ্রগতি, তাহলো ওপেনিং জুটিতে ৪৩ রান ওঠা। ওপেনাররা ব্যর্থ এক বছরের বেশি সময় ধরে।

নানা সময় লিটন দাস, নাইম শেখ, সৌম্য সরকার, নাজমুল শান্ত, সাইফ হাসান, মুনিম শাহরিয়ার, এনামুল হক বিজয়, মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমান রুম্মন- ১০ জনকে দিয়ে ‘ট্রাই’ করানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি।

আজ অবশ্য এক বছর পর ওপেনিং জুটি চল্লিশ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তারপর পরই ভুল পথে হাঁটা। সৌম্য (১৪ বলে ১৪) আর শান্ত (২০ বলে ২৫) ‘ওয়েল সেট’ হয়েও মাত্র ৬ বলের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন।

এরপর যারা ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক, সেই লিটন আর সাকিবও ফিরে গেছেন অল্প সময়ে আলগা শট খেলে। মিডল অর্ডারে আফিফ (২৭ বলে ৩৮) চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু ইয়াসির আলী রাব্বি আর নুরুল হাসান সোহান হতাশায় ডুবিয়েছেন। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত প্রশংসা পেতেই পারেন। শেষদিকে তার ব্যাট থেকে আসা ১২ বলে ২০ রানের হার না মানা ইনিংসের ওপর ভর করেই স্কোর ১৪০‘র ঘর পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। না হয় ১৩০-এর বেশি হতো না। নেদারল্যান্ডস যত কাছে চলে গিয়েছিল, পুঁজি আরেকটু কম হলে কি হতো বলা মুশকিল।

কথা হলো, যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আরেকটি জয় ধরে রেখেছে টাইগাররা, সেই জিম্বাবুয়ের বোলিং ডাচদের চেয়ে ধারালো। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে কমজোরি বোলিং ডাচদের। কিন্তু তাদের এ দুর্বল বোলিংয়ের বিপক্ষেও বাংলাদেশের ব্যাটাররা আগের মতই অনুজ্জ্বল, শ্রীহীন।

একজন ব্যাটারও লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি। শান্ত আর সৌম্য ভালো শুরু করেও যথারীতি ব্যর্থ। লিটন দাসও কেমন যেন আড়ষ্ট। ভালো কিছু করার দৃঢ় সংকল্পটাই অনুপস্থিত। শট খেললেন যেন অর্ধেক শক্তি দিয়ে। মনে হলো আত্মবিশ্বাস আর নিজের সামর্থ্যের ওপর যেন আস্থা কম।

অধিনায়ক সাকিব উইকেটে গিয়ে স্পিন পেয়েই যেন একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে মারতে গিয়ে সীমানার ওপরে ক্যাচ দিলেন। আর ইয়াসির আলী রাব্বি ও সোহানও নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্যটা যথাযথভাবে পালন করতে পারেননি। দুজনই ভুল পথের যাত্রী। অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ এ ম্যাচে থাকতে পারতেন অনায়াসে। তাতে পঞ্চম বোলারের অভাব বোধ হতো না। এই জায়গাটা নিয়ে ভাবতে হবে পরের ম্যাচগুলোতে।

তাসকিন আর হাসান মাহমুদ যতটা বারুদ ছড়িয়েছেন। সেটা না হলে পঞ্চম বোলারের অভাবটা ভালোই ভোগাতে বাংলাদেশ দলকে। দল নির্বাচনে ত্রুটি, ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটারদের দলের জন্য অবদান রাখতে না পারার ব্যর্থতা অব্যাহত আছে জয় পেলেও। এই অবস্থার উন্নতি ঘটাতে না পারলে বড় কোনো দলের বিপক্ষে কিংবা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও জেতা কঠিন হবে।

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন