বৃষ্টিটা বরাবরই দুর্ভাগ্য বয়ে আনে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। এই বৃষ্টির কারণেই কতগুলো ম্যাচে তাদের হারতে হয়েছিল, কত বিশ্বকাপ থেকে তাদের বিদায় নিতে হয়েছিল! সেই বৃষ্টির দুর্ভাগ্য আবারও ফিরে এলো হোবার্টে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। যার ফলে নিশ্চিত জয়ের ম্যাচটিও জিততে পারলো না তারা। কুইন্টন ডি কক যে মারমুখি অবস্থায় ছিলেন, তাতে আর কয়েকটি বল পেলেই বাকি ১৩ রান করে ফেলতে পারতেন হয়তো।
এই ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ার ফলে বাধ্য হয়ে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নিতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ধাক্কা খেলো নেট রানরেটে। কারণ রানরেট যোগ হলো না তাদের। যদি জিততে পারতো, তাহলে শুধু পূর্ণ ২ পয়েন্টই নয়, রানরেটও অনেক বেড়ে যেতো প্রোটিয়াদের। তার কোনোটিই হলো না।
বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ৯ ওভারের খেলা নির্ধারণ করেন ম্যাচ রেফারি। জিম্বাবুয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ৭৯ রান। ৯ ওভারে প্রয়োজন ৮০ রান। বৃষ্টির ঘনঘটা ছিল তখনও। তবুও দক্ষিণ আফ্রিকা মাঠে নামে এবং প্রথম ওভারেই তুলে নেয় ২৩ রান। ১.১ ওভারে ২৪ রান তোলার পরই আবার বৃষ্টি নামে।
বৃষ্টি শেষে খেলা শুরু হলে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৭ ওভারে ৬৪ রান। এ পরিস্থিতিতে দ্রুতগতিতে রান তুলতে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। কুইন্টন ডি ককের লক্ষ্য ছিল, যত দ্রুত সম্ভবত ম্যাচটা জিতে নেয়ার। যে কারণে ৩ ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকা স্কোরবোর্ডে রান যোগ করে ফেলে বিনা উইকেটে ৫১। এ সময় আবারও বৃষ্টি নেমে আসে।
দক্ষিণ আফ্রিকা অপেক্ষা করতে থাকে খেলা শুরু হওয়ার জন্য। কিন্তু বৃষ্টি থামার আর লক্ষ্মণ ছিল না। যার ফলে খেলা শুরু করা যায়নি। ম্যাচ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়ও পার হওয়ার পর আম্পায়াররা ম্যাচ বাতিল বলে ঘোষণা করতে বাধ্য হন।
কিভাবে মাঠে নামলেই জয় নিশ্চিত ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার?
নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও ম্যাচের ফল নির্ধারণ করার জন্য দুই দলকে কমপক্ষে পাঁচ ওভার করে ব্যাট করতে হয় (কোনও দল যদি পাঁচ ওভারের আগেই রান তাড়া করে জিতে যায়, তাহলে সেটা ভিন্ন কথা)। পাঁচ ওভারের ম্যাচ যদি করা যেত, তাহলে ডার্কওয়ার্থ লুইস (ডিএল মেথড) পদ্ধতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য প্রয়োজন হত ৪৬ রান। যে রানটা ততক্ষণে তুলে ফেলেছিলেন প্রোটিয়ারা।
শেষবার বৃষ্টি যেভাবে হয়েছিলো এবং সময় চলে যাওয়ার কারণে যদি একবারও প্রোটিয়ারা মাঠে নামার সুযোগ পেতো, তাহলে ম্যাচটার লক্ষ্য নতুন করে ৫ ওভারেই নির্ধারণ করার সম্ভাবনা ছিল। তাতে শুধু প্রোটিয়ারা মাঠে নামলেই হতো, খেলতে হতো না। কারণ, ততক্ষণে জয়ের জন্য নির্ধারিত রান তারা তুলেই ফেলেছে।
অর্থাৎ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাঁচ ওভারের ম্যাচ করার মতো সময় থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকা মাঠে নামলেই ম্যাচ জিতে যেত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে বৃষ্টি না থামায় পাঁচ ওভারের ম্যাচ করার মতো সময়ও ছিল না আর। তাই ভেস্তে যায় ম্যাচ। নিশ্চিত দুই পয়েন্ট হাতছাড়া হয়ে যায় প্রোটিয়াদের। শুধু তাই নয়, নেট রানরেটে অনেকটা এগিয়ে যেতে পারত দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু সেটাও হল না।
চালাকি করেছিল জিম্বাবুয়ে?
বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে মনোরঞ্জনের অভাব ছিল না এতটুকু। নাটকীয় ম্যাচে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও দুর্ভাগ্য তাড়া করে তাদের। তবে, কিছুটা পরিকল্পনামাফিকই পরাজয় এড়িয়ে সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচ থেকে পয়েন্ট কুড়িয়ে নেয় জিম্বাবুইয়ানরা।
এক পয়েন্ট পেতে কিভাবে সেই পরিকল্পনা করেছিল জিম্বাবুয়ে? প্রথম বৃষ্টি আসার আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ১.১ ওভারে তুলে ফেলে ২৪ রান। বৃষ্টির পর পুনরায় ম্যাচ শুরু হলে জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭ ওভারে ৬৩ রান। রিচার্ডের দ্বিতীয় ওভারে ডি'কক চারটি চার মারেন। ২ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা সংগ্রহ করে নেয় ৪০ রান।
এরপরই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা অযথা সময় নষ্ট করতে শুরু করেন। হালকা বৃষ্টি চলছিল। তাই জিম্বাবোয়ে বুঝে যায় যে, পুনরায় বৃষ্টির জন্য ম্যাচ থমকে গেলে খেলা বাতিল হতে বাধ্য। তাহলে পয়েন্ট ভাগাভাগি।
শেষমেশ সেটাই হয়। ৩ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা বিনা উইকেটে ৫১ রান তোলার পরে বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায় এবং শেষমেশ ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা জয় থেকে মাত্র ১৩ রান দূরে দাঁড়িয়ে যায়। ১ পয়েন্ট করে ভাগ করে দেওয়া হয় উভয় দলকে।
ডি ককের রেকর্ড
৯ ওভারে জিম্বাবুয়ে সংগ্রহ করে ৭৯ রান। ৮০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ওভারেই ২৩ রান সংগ্রহ করে নেয়।
তেন্দাই চাতারার ওভারের প্রথম ৫টি বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান ডি কক। শেষ বলে নেন ১ রান। সেই সুবাদে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড গড়েন ডি'কক।
কোনও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ইনিংসের প্রথম ওভারে এটিই সবচেকে বেশি রানের রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল ডেভিড ওয়ার্নারের। তিনি ২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ইনিংসের প্রথম ওভারে ২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ডি'কক শেষ পর্যন্ত ৮টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ১৮ বলে ৪৭ রান করে অপরাজিত থেকে যান।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন