টিকটকে হিজাব-হ্যান্ডব্যাগ বিক্রির রমরমা ব্যবসা ইন্দোনেশিয়ায় | Daily Chandni Bazar টিকটকে হিজাব-হ্যান্ডব্যাগ বিক্রির রমরমা ব্যবসা ইন্দোনেশিয়ায় | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৬:১৪
টিকটকে হিজাব-হ্যান্ডব্যাগ বিক্রির রমরমা ব্যবসা ইন্দোনেশিয়ায়
অনলাইন ডেস্ক

টিকটকে হিজাব-হ্যান্ডব্যাগ বিক্রির রমরমা ব্যবসা ইন্দোনেশিয়ায়

বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ ইন্দোনেশিয়া। ফলে সেখানে হিজাবের চাহিদা প্রচুর। ইন্দোনেশীয়দের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির একটি বড় অংশই তৈরি হয় পশ্চিম জাভার সিকেলেংকা এলাকায়। সেখানকার বহু বাসিন্দার উপার্জনের প্রধান মাধ্যম হিজাব তৈরি ও বিক্রি। তেমনই এক দম্পতি ইঙ্গিত পাম্বুদি ও তার স্ত্রী মুদিয়া আয়ু।

সিকালেংকার বেশিরভাগ হিজাব বিক্রি হয় ইট-পাথরের তৈরি পাইকারি বাজারগুলোতে। তবে পাম্বুদি ও তার স্ত্রী বেছে নিয়েছেন আরও আধুনিক বিপণন কৌশল। জনপ্রিয় ভিডিও অ্যাপ টিকটকে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের তৈরি হিজাব বিক্রি করছেন তারা।

২৫ বছর বয়সী পাম্বুদি বলেন, আমাদের বাস্তবিক কোনো দোকান নেই। যখন জানতে পারলাম, আমি টিকটকের লাইভ স্ট্রিমে পণ্য বিক্রি করতে পারি, তখন ভাবলাম, আমাদের জন্য এটি বেশ ভালো সুযোগ।

প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি মানুষ নিয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম জনসংখ্যা ইন্দোনেশিয়ার। সেখানে টিকটক ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। গত জুলাই মাস পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৬৯ লাখ। যুক্তরাষ্ট্রের পরে ইন্দোনেশিয়াই চীনা অ্যাপটির জন্য সবচেয়ে বড় বাজার।

২০১৭ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে প্রবেশ করে টিকটক। ‘পর্নোগ্রাফিক ও আপত্তিকর’ বিষয়বস্তুর জন্য কিছুদিন অ্যাপটিকে নিষিদ্ধ করেছিল ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালে রমজান মাসে লাইভ স্ট্রিমিং ই-কমার্স ফাংশন চালু হওয়ার পর থেকে ইন্দোনেশিয়ার ই-কমার্স খাতে ঝড় তুলতে শুরু করে টিকটক।

পবিত্র মাসটিতে অ্যাপটির ভিউয়ারশিপ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়। কারণ এ সময় মুসলিমরা সেহরি খাওয়ার জন্য শেষরাতের দিকে জেগে থাকেন। এটিকে টার্গেট করেই লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা জমিয়েছেন ইন্দোনেশীয় উদ্যোক্তারা।

পাম্বুদির কাছে টিকটকের মাধ্যমে ব্যবসার খবর পৌঁছেছিল গত রমজানে। তিনি বলেন, একজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি ছিলেন অনেকটা টিকটকের ‘রিলেশনশিপ ম্যানেজার’র মতো। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমি প্ল্যাটফর্মটিতে লাইভ শপিং করতে পারি।

ওই সময়ে পাম্বুদি প্রতি মাসে মাত্র এক হাজারের মতো হেডস্কার্ফ বিক্রি করতেন। অনলাইন বেচাকেনায় তার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নিজেদের তৈরি হিজাব বিক্রির চেষ্টা করছিলেন এ যুবক। তাদের ‘মুডি মুডি’ নামের হিজাবের খুচরা দাম ছিল সর্বোচ্চ তিন ডলার। তবে এসব কিছু বদলে দেয় টিকটক লাইভ।

পাম্বুদি বলেন, রিলেশনশিপ ম্যানেজার কীভাবে লাইভ স্ট্রিমিং করতে হয় সে সম্পর্কে আমাদের প্রশিক্ষণ দেন। ফিচারগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, ব্যাকগ্রাউন্ড, আলো, সরঞ্জাম এবং গ্রাহকদের কী বলতে হবে সব শেখান তিনি। পুরো প্রশিক্ষণে আমাদের প্রায় পাঁচ মাস সময় লেগেছিল।

প্রশিক্ষণ শেষে পাম্বুদি ক্যামেরার পেছনে এবং পর্দায় আয়ুকে দাঁড় করিয়ে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে কয়েক ঘণ্টা লাইভ স্ট্রিমিং শুরু করেন তারা। তবে রাতের স্ট্রিমিংয়েই সবচেয়ে বেশি ক্রেতা পাওয়া যায়, তা শিগগির বুঝতে পারেন এ দম্পতি।

পাম্বুদি বলেন, আমরা রাত ৮টার পর লাইভে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ ওই সময়টাতেই লোকজন কাজ শেষে বাসায় ফেরে, এশার নামাজ পড়ে এবং সাধারণত, বাসায় আরাম করতে করতে ফোনে স্ক্রল করে।

তিনি বলেন, বিক্রি খুব ভালো হচ্ছিল, মানুষ (হিজাব) কিনছিল। শুরুতে, আমরা রাত ১১টার মধ্যে সেশন শেষ করতাম। কিন্তু পরে ফজরের ওয়াক্ত পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং এর ফলাফল ছিল দুর্দান্ত।

পাম্বুদি জানান, ভোরবেলা তাদের সেরা সময় (পিক টাইম)। তখন শত শত দর্শক লাইভস্ট্রিমে যোগ দেন। আর জাতীয় অনলাইন শপিং দিবসের মতো বিশেষ দিনগুলোতে দর্শকের সংখ্যা কয়েক হাজারও হতে পারে।

পাম্বুদি দম্পতি এখন প্রতি মাসে ৩০ হাজার পিস পর্যন্ত হেডস্কার্ফ বিক্রি করেন, যা তাদের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের আগের দিনগুলোর তুলনায় অন্তত ৩০গুণ বেশি।

সূত্র: আল-জাজিরা

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন