
কাতার বিশ্বকাপে সরাসরি না থেকেও সবচেয়ে আলোচিত একটি নাম হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিন। আরব বিশ্বে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ বিশ্বকাপে ফুটবলাররা মাঠের ভেতর ফিলিস্তিনি পতাকা তুলে ধরেছেন, দর্শকেরা ইসরায়েলি মিডিয়াকে বয়কট করেছেন, বাতাসে কান পাতলেই শোনা গেছে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ সুর। এ কারণে ফিলিস্তিনিরাও বলতে শুরু করেছেন, কাতার বিশ্বকাপ প্রমাণ করেছে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের বিষয়টি এখনো ‘মরে যায়নি’৷
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন চুক্তি করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদান। সৌদি আরবের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়ছে ইসরায়েলিদের। ফলে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠেন অনেকে।
কিন্তু ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান জিবরিল রাজুব বলছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েকটি আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পর ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের বিষয়টি মরে গেছে, এই ধারণা মিথ্যা প্রমাণ করেছে কাতার বিশ্বকাপ।
মরক্কানদের সমর্থন
ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়ে পশ্চিম সাহারা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়েছে আফ্রিকান দেশ মরক্কো। তবে এসব চুক্তি বা আলোচনা হয়েছে মূলত সরকার পর্যায়ে। এটি যে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে কাতার বিশ্বকাপেই।
স্পেন ও কানাডার বিরুদ্ধে জয়ের পর মাঠে ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শন করেছেন মরক্কোর কয়েকজন ফুটবলার ও কর্মকর্তা৷ বিশ্বকাপ চলাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পোস্টও দিয়েছেন কয়েকজন খেলোয়াড়৷ তিউনিশিয়া-ফ্রান্স ম্যাচের মধ্যেও ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি৷
আরবদের ওপর বিশ্বাস বেড়েছে
ফিলিস্তিনের অন্যতম শীর্ষ জনমত জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘প্যালেস্টাইনিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ’ সম্প্রতি এক জরিপে বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েকটি আরব দেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কারণে হতাশ হয়েছিলেন ফিলিস্তিনিরা৷ কিন্তু কাতার বিশ্বকাপের কারণে আরব বিশ্বের প্রতি তাদের আস্থা কিছুটা হলেও ফিরেছে৷
বিশ্বকাপের ‘প্রকৃত বিজয়ী’ ফিলিস্তিন
ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম স্বীকার করেছে, কাতার বিশ্বকাপ দেখিয়ে দিয়েছে, আরব জনগণ আসলে কাদের সমর্থন করেন৷ মারিভ সংবাদপত্র এক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘বিশ্বকাপে মরক্কোর বিষয়টি প্রমাণ করে দিয়েছে, আরব বিশ্ব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেয়ে এখনো অনেক দূরে৷’ আর বামপন্থি হারেৎজ পত্রিকা বলেছে, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্বকাপের প্রকৃত বিজয়ী ফিলিস্তিন৷’
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন