পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন জাতিসংঘের দুই শান্তিরক্ষী। আহত হয়েছেন আরও চারজন। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর টিম্বক্টুতে দায়িত্বপালনকালে জাতিসংঘ পুলিশের ওপর গুলি চালালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন (মিনুসমা) জানিয়েছে, হামলায় নিহতদের মধ্যে এক নারী পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আহতদের স্থানীয় সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। তবে হতাহতরা কোনো দেশের নাগরিক তা জানা যায়নি।
মিনুসমার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলাকারীকে নিবৃত্ত করা এবং তার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এলাকাটির নিরাপত্তায় তৎক্ষণাৎ একটি ‘কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স’ পাঠানো হয়েছিল বলে জানিয়েছে শান্তিরক্ষা মিশন।
মিশন প্রধান এল-ঘাসিম ওয়েন বলেছেন, তিনি এই জঘন্য হামলায় গভীরভাবে মর্মাহত। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, নিহত শান্তিরক্ষী ও তাদের পরিবারের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন মিনুসমা প্রধান।
ওয়েন বলেছেন, বর্তমান কঠিন পরিবেশ সত্ত্বেও মিনুসমা তার লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা ছাড়বে না। শান্তিরক্ষীদের ওপর আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ হতে পারে উল্লেখ করে তিনি জানান, এ ধরনের অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনতে সম্ভাব্য সব কিছু করা হবে।
২০১২ সাল থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহের কারণে অস্থিতিশীল মালি। এ সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কয়েক লাখ।
সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকান দেশটির উত্তর, পূর্ব ও মধ্যভাগে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় মিনুসমার শান্তিরক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ২০২০-২১ সালের মধ্যে দু’বার সামরিক অভ্যুত্থানের কবলে পড়েছে মালি।
রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের এনে মালির সরকারি বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মিশন ও মালির সামরিক শাসকদের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।
জার্মানি গত বৃহস্পতিবার বলেছে, মালির সামরিক সরকার যদি অবাধ কাজের সুযোগ দেয় এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, কেবল তাহলেই তাদের সৈন্যরা ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোতায়েন থাকবে। মিনুসমায় প্রায় ১ হাজার ১০০ জন জার্মান সৈন্য রয়েছেন।
গত মাসে মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও আইভরি কোস্ট।
মালিতে শান্তিরক্ষার এ মিশনে অন্যতম সর্বোচ্চ সৈন্য প্রেরক বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের হিসাবে, পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বাংলাদেশের ১ হাজার ৪১১ জন সামরিক কর্মকর্তা ও ২৮০ জন পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন ছিলেন।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন