শ্যাম রাখি না কুল রাখি, পিএসজির মালিক নাসির আল খেলাইফির হয়েছে সেই দশা। বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হচ্ছে এমবাপের ফ্রান্স। ক্লাব ফুটবলে এই দুই মহাতারকাই খেলছেন ফ্রান্সের ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইতে।
দুই তারকাকে ফাইনালে পেয়ে নাসির আল খেলাইফি বেশ উচ্ছ্বসিতই বলা চলে। কেননা তাদের কারণে পিএসজির ব্রান্ড ভ্যালুও যে হু হু করে বাড়ছে! কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই ফাইনাল ম্যাচে খেলাইফি কাকে সমর্থন দেবেন? কার জন্যেই বা তিনি গলা ফাটাবেন ফাইনালে? এমন প্রশ্ন সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
ফাইনালে যেই হারুক বা জিতুক, খেলাইফির জন্য তা হবে বেশ আনন্দের। কেননা তাদের দিয়ে তিনি ক্লাবকে সবার সামনে তুলে ধরতে পারবেন।
কাতার সরকারের সঙ্গে ফ্রান্স সরকারের সম্পর্কটা বেশ ভালো। ফ্রান্স এবং মরক্কোর ম্যাচে আল বায়েত স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্সে দেখা গিয়েছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোকে। পিএসজির মালিক খেলাইফিও একজন কাতারি বিনিয়োগকারী।
আরব দেশটি ইউরো তথা ফ্রান্সে বেশ বড় পরিমাণে গ্যাস রপ্তানি করে থাকে। অন্যদিকে কাতারের সঙ্গে আর্জেন্টিনার সরকারের সেই রকম আলোচিত সম্পর্ক নেই।
উল্টো কিছুদিন আগে আর্জেন্টিনার ভাইস প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোকে রাজনৈতিক দিক দিয়ে সমালোচনা করেন। অবশ্য ফাইনাল ম্যাচের আগে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন একসঙ্গে বসে ফাইনাল ম্যাচটি উপভোগ করার। তবে এরই মধ্যে আলবার্তো জানিয়েছেন তিনি কাতার যাচ্ছেন না। একজন কাতারি নাগরিক হিসেবে রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় অবশ্যই নাসির আল খেলাইফি চাইবেন ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হোক।
পিএসজি ক্লাবের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কথা চিন্তা করলেও এই আরব ধনকুবেরের বাজির ঘোড়া এমবাপে, যিনি ফ্রান্সের হয়ে খেলছেন। চলতি মৌসুমেই তাকে ২০২৫ সালে পর্যন্ত রেখে দেওয়ার চুক্তি করে পিএসজি ৬৩০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে।
অথচ এমবাপের ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন চাউর হয়েছিল বেশ ভালোভাবেই। রিয়াল মাদ্রিদও তাকে কিনতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু খেলাইফির সঙ্গে এমবাপের এক বৈঠকেই সব পাল্টে গিয়েছিল সেদিন। এমবাপেকে দলে রাখতে তাকে যতরকম সুবিধা দেওয়া যায়, সবরকম সুবিধা দেওয়ার শর্ত রেখেই তাকে সেদিন রাখা হয়েছিল।
মেসির বেতন কাঠামোর দিক দিয়ে চিন্তা করলে এমবাপের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে তিনি। এক বছর পিএসজিতে খেলেছেন এবং বর্তমান মৌসুমটি চলমান। মোট দুই মৌসুম খেলার চুক্তি প্রথমে করলেও পরের মৌসুমে তিনি ক্লাব ছাড়তেও পারেন এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কিন্তু পিএসজিও তাকে আরো এক বছর রাখতে চুক্তি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মেসির কাছে বিশ্বকাপ জয়টা যতটা না ক্লাব, তার থেকেও বেশি দরকারি আর্জেন্টিনা দলের জন্য। কেননা মেসির বাজার দর বাড়ানো বা কমানোর এখন কিছু নেই। তার ঝুলিতে রয়েছে ৭টি ব্যালন ডি’অর শিরোপা।
অন্যদিকে এমবাপের জন্য এটি বিশাল সুযোগ ২৩ বছর বয়সে টানা দুই বিশ্বকাপ জিতে নিজের বাজার দর আকাশচুম্বী করার, যাতে করে ক্লাবে আরো বেশি দাম পান তিনি। মেসির সঙ্গে এমবাপের ক্লাব পর্যায়ের আর্থিক সুবিধার তুলনা অনেকটা ইলন মাস্কের সঙ্গে একজন সাংবাদিকের বেতনের তুলনার মতো।
আরেকদিক দিয়ে মেসির সঙ্গে এক সরলরেখাতেই হাঁটেন নাসের আল খেলাইফি। কেননা এই দুইজনই চরম ঘৃণা করেন রিয়াল মাদ্রিদকে। খেলাইফি তো কোনো খুঁত পেলেই রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে সমালোচনা করতে ভুলেন না। বিশ্বকাপের ভেতরেই মাদ্রিদের বিভিন্ন মানুষ মেসি ও আর্জেন্টিনাকে ফিফার সুবিধা দিচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলেছেন।
বড় ব্রান্ড ভ্যালুর দিক দিয়ে ফ্রান্স, পিএসজি ও এমবাপে একই। কারণ এই তিনজনেরই স্পন্সর প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নাইকি। সেক্ষেত্রে ফ্রান্স যদি বিশ্বকাপ পায়, সেটি পিএসজি ও এমবাপে দুজনের জন্যেই বড় কিছু। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা ও মেসি দুজনেরই স্পন্সর হচ্ছে অ্যাডিডাস। সেক্ষেত্রে তেমন কোনো সুবিধা পিএসজি পাবে না তাদের থেকে।
দিনশেষে তারা দুজনই অসাধারণ ফুটবলার এবং পিএসজির হয়েও দুজন দারুণ খেলছেন। তারা দুজনই এবার ব্যালন ডি’অর জয়ের জন্য লড়াই করছেন।
এছাড়া বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল, গোল্ডেন বুট দুটোরই পাওয়ার সবচেয়ে বড় দাবিদার এই দুই মহাতারকা। একজনের বয়স ২৩ বছর আর অন্যজনের ৩৫।
যদি দুজনকে বিশ্বকাপ ট্রফি দেওয়া যেতো, খেলাইফি হয়তো সেটাই করতেন। কিন্তু তা তো আর সম্ভব নয়। যদি ব্যবসা, টাকা, ব্রান্ড ভ্যালু ইত্যাদির কথা চিন্তা করে খেলাইফি সমর্থন করেন, তাহলে তিনি নিঃসঙ্কোচেই এমবাপের সমর্থক বনে যাবেন। অন্যদিকে যদি ফুটবলের সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে চান, তাহলে তিনি মেসির জন্যেই গলা ফাটাবেন। খেলাইফি আসলে কোনটি করবেন, সেই বিষয়ে তার কাছ থেকে পরিষ্কার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন