বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় রয়েছে চার বিঘা জমি। পাকিস্তান আমলে কেনা এই সম্পত্তিতে রয়েছে বিশাল গোডাউন, যা এখন ‘শেখ হাসিনার গোডাউন’ নামে পরিচিত।
এই জমি দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) ব্যক্তিগত সফরে খুলনায় যাচ্ছেন। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে তিনি সড়কপথে খুলনায় যাবেন বলে জানা গেছে। তবে এই সফরে তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবেন কী না তা এখনো জানা যায়নি।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে গত মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জমিটি পরিদর্শন করেছেন।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরটা একেবারেই ব্যক্তিগত। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ নাও করতে পারেন তিনি।
সূত্র জানায়, পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছার নামে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ভৈরব নদীর তীরে নগরঘাটা এলাকায় চার বিঘা জমি কিনেছিলেন। পরবর্তীতে ওই জমিতে নির্মাণ করা হয় পাট গোডাউন যা বর্তমানে শেখ হাসিনার গোডাউন নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
জানা যায়, দিঘলিয়ায় এই চার বিঘা জমির কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও জানতেন না। ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে এই জমির কথা জানতে পারেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় পাটের গুদাম ও এক কক্ষবিশিষ্ট একটি আধাপাকা ঘর ছিল এই জমিতে। এই পাট গুদাম দেখাশোনা করতেন বঙ্গবন্ধুর ছোটভাই শেখ আবু নাসের। ভাইয়ের জমি দেখাশুনার পাশাপাশি শেখ আবু নাসের একসময় এখানেই তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্পত্তির মালিকানা পান। স্থানীয় আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে শেখ আবু বকর পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রায় ২০ বছর এই জমিতে বসবাস ও দেখাশোনার কাজ করেছেন। বর্তমানে জাহিদুল ইসলাম নামে একজন এই সম্পত্তি দেখাশোনা করছেন। তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের মাধ্যমে এই দায়িত্ব পান। পুরোনো সেই গুদামঘর ভেঙে নতুন আধুনিক গুদামঘর নির্মাণ করা হয়েছে এবং নদী তীরে একটি রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হয়েছে।
নগরঘাট-দিঘলিয়া প্রধান সড়কের পাশ দিয়ে গোডাউনের যে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে তার নাম দেওয়া হয়েছে শেখ রাসেল সড়ক। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আদমজী জুট মিলের গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হয় এটি। এরপর নরসিংদীর একটি পাটকলের গুদাম হিসেবে কিছুদিন ব্যাবহার করা হয়। ২০০৭ সালে খুলনার জুয়েল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে গোডাউনটি ভাড়া দেওয়া হয়।
এই সম্পত্তির তৎকালীন কেয়ারটেকার আবু বকর এই জমিতে উৎপাদিত নারিকেল, কলা, বিভিন্ন রকমের সবজিসহ বিভিন্ন ফলমূল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছিলেন। দিঘলিয়ার সঙ্গে সেই পাকিস্তান আমল থেকে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুলনা সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল (শুক্রবার) খুলনায় আসবেন।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন