দেশের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়- এমন কোনো উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় ও ইন্ধন না দিতে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত কোনো অপপ্রচারকে প্রশ্রয় বা উসকানি দেবেন না। এমন কোনো উদ্ভট ধারণায় ইন্ধনও যোগাবেন না। সতর্ক থাকবেন, মানুষের অধিকার কেউ যাতে কেড়ে নিতে না পারে।’
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বর্তমান সরকারের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে আওয়ামী লীগ সরকার
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, স্বাধীনতাবিরোধী, ক্ষমতালোভী, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী এবং পরগাছা গোষ্ঠীর সরব তৎপরতা শুরু হয়েছে। এদের লক্ষ্য ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। কাজেই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরা লুণ্ঠন করা অর্থ দিয়ে দেশে-বিদেশে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী ও বিবৃতিজীবী নিয়োগ করেছে। তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবেন না।’
অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, নির্বাচন হবে এবং তার সরকার এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বাংলাদেশে এ প্রথম একটি আইন পাস করা হয়েছে। সেই আইনের আওতায় সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। সরকার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের দল, জনগণের শান্তিতে বিশ্বাসী, জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। জনগণ ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে আওয়ামী লীগ দেশ গড়ার জাতীয় দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। যদি বিজয়ী না করে, তাহলে আমরা জনগণের কাতারে চলে যাবো। তবে যেখানেই থাকি, আমরা জনগণের সেবা করে যাবো।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তবে ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। একইসঙ্গে কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমালের এবং জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন আন্তজার্তিক ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। জাতিসংঘসহ দুই ডজনেরও বেশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংগঠনে বাংলাদেশ সক্রিয় সদস্য। গত অক্টোবরে পঞ্চমবারের মতো বিপুল ভোটে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বন্দি জীবনের অবসান হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমানার শান্তিপূর্ণ মীমাংসার মাধ্যমে আমরা বঙ্গোপসাগরের এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকার ওপর সার্বভৌম অধিকার অর্জন করেছি। আমরা ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।’
দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ঢাকায় হানিফ ফ্লাইওভার, তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভার, কমলাপুর-শাহজাহানপুর ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগামে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বদ্দারহাট ফ্লাইওভারসহ বহুসংখ্যক ছোটবড় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরাই প্রথম ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা, ঢাকা-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করি। ঢাকা-মাওয়া-জাজিরা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের প্রথম এ ধরনের মহাসড়ক। এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক, আরিচা মহাসড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এয়ারপোর্ট থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আগামী বছর যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা পর্যন্ত এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চলছে। যমুনা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। গত নভেম্বরে একদিন ১০০ সেতু এবং ডিসেম্বরে ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা হয়, যা দেশের উন্নয়নের ইতিহাসে এক অনন্য অর্জন।’
তিনি আরও বলেন, ২০০৯-২০২২ পর্যন্ত প্রায় ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এক লাখ ১৩ হাজার ৩০৩ মিটার সেতু নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ, ২১ হাজার ২৬৭ মিটার কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন