‘বঙ্গবন্ধুর বপন করা বীজ আজ ফল দিচ্ছে’ | Daily Chandni Bazar ‘বঙ্গবন্ধুর বপন করা বীজ আজ ফল দিচ্ছে’ | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১০ জানুয়ারী, ২০২৩ ১৬:০১
‘বঙ্গবন্ধুর বপন করা বীজ আজ ফল দিচ্ছে’
অনলাইন ডেস্ক

‘বঙ্গবন্ধুর বপন করা বীজ আজ ফল দিচ্ছে’

১০ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। জাতীয় ইতিহাসে ঐতিহাসিক, অবিস্মরণীয় এক দিন। তার ফিরে আসার ফলেই আজকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ এবং তার অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি। তার ফিরে আসা পূর্ণতা দিয়েছিল স্বাধীনতাকে। জাতি পেয়েছিল বিজয়ের আসল স্বাদ।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে দেওয়া ভাষণ সব সময় প্রাসঙ্গিক। সেখানে ছিল নতুন দেশ গঠন ও এগিয়ে নেওয়ার নানান দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে না আসলে স্বাধীনতা অঙ্কুরে বিনষ্ট হতো। বিজয় থমকে যেত, উত্থান হতো অপশক্তির। যার নামে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, তিনি আসার পরই পূর্ণতা পায় সেই যুদ্ধের বিজয়। এরপর তিনটি বছর অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যায় দেশ। তিনি বীজ বপন করেন, সেই বীজের ফল ভোগ করছি আমরা।

এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যে ভাষণ দিয়েছেন, সেটি আমাদের জন্য সব সময় প্রাসঙ্গিক। সেই ভাষণে তিনি বহু কথা বলেছেন। স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট বর্ণণা করেছেন, নতুন দেশ কীভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, সেগুলো বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের বর্বর হানাদার বাহিনী পরাজয় বরণ করে আত্মসমর্পণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এ দেশ থেকে চলে গেছে। কিন্তু তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যে দোসররা ছিল, যারা তাদের সঙ্গে একযোগে আমাদের ৩০ লাখ মানুষ হত্যায় জড়িত ছিল, তারা কিন্তু দেশেই রয়ে গেছে। এই বিশ্বাসঘাতকরা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এই ষড়যন্ত্র চলবে। আপনারা এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন।’

ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এই যে কথাটা তিনি বলেছেন। এটা যে কত সত্য কথা এবং কত সহজভাবে বলেছেন, সেটি আমরা পরবর্তী সময়ে বুঝতে পেরেছি। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এই ষড়যন্ত্রের ফলেই সপরিবারে নিহত হলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের ফলেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড বর্ষণ হলো। এখনো সেই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত অব্যাহত আছে।

তিনি বলেন, আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যার্তন দিবসে সাড়ে ১৬ কোটি বাঙালি আজ ঐক্যবদ্ধভাবে এক জায়গায় অন্তত একমত হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র তারা গ্রহণ করবে না, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের কোনো ষড়যন্ত্রকারীর সঙ্গে তারা কোনোদিন কোনো ঐকমত্যে আসবে না, তাদের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করা বা তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া, এসব থেকে নিজেদের বিরত রাখবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনেই মূলত স্বাধীনতা বা বিজয় পূর্ণতা পায়। কারণ বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে না আসলে স্বাধীনতা অর্থবহ হতো না। এটা অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যেত। ফলে ১৬ ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয় থমকে দাঁড়াতো। নানা ধরনের অপশক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি, পাকিস্তানপন্থি অপশক্তি তখনও সক্রিয় থাকতো। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মধ্য দিয়ে যে ধরনের পরিকল্পনা ছিল, এর উদ্দেশ্যটাই ছিল যেন এই দেশটা না দাঁড়াতে পারে।

তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত যে উন্নয়ন, সেগুলোর কোনোটই হতো না, জাতির পিতা না আসলে। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সালের মধ্যে তিনি যে পরিকল্পনা করেছেন, সেসব নীতি, দর্শন পদক্ষেপের সম্প্রসারিত রূপই আজকের উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব কাজ করছেন, সেটি বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত নীতি, দর্শন ও তার গৃহীত পদক্ষেপ, সেগুলোর বাস্তবায়ন করছেন, কোনোটার পূর্ণাঙ্গ রূপ দিচ্ছেন। এজন্য এই সময় বীজ বপনের উৎকৃষ্ট সময়। ওই সময় বঙ্গবন্ধু সব বীজ বপন করেছেন। সেগুলো এখন ফল দিচ্ছে। সেগুলোর একেকটা বাস্তবায়নের ফলে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নত সমাজ গঠনের উদ্যোগ বঙ্গবন্ধু নিয়েছেন। নেত্রী সেটা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। সে কারণে আজকে এসডিজি অর্জনে সাফল্য এসেছে।

অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং এর মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা ও স্বাধীন রাষ্ট্র, সবগুলো এক ও অভিন্ন সত্তা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি, কিন্তু বিজয় ছিল অসম্পূর্ণ। আমাদের স্বাধীনতাও ছিল অসম্পূর্ণ। কেননা বঙ্গবন্ধু তখনও আমাদের মাঝে ফিরে আসেননি। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে। বন্দি অবস্থায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগে সামরিক আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমাগত বিজয় এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কূটনৈতিক চ্যানেলে চাপ প্রয়োগ করার কারণে ইয়াহিয়া সামরিক জান্তার পক্ষে সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। পরে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু বিজয়ীর বেশে তার লালিত স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

তিনি বলেন, তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন বলেই ন্যূনতম সময়ের মধ্যে আমাদের মিত্র বাহিনী দেশে ফিরে গিয়েছিল। তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার ফলেই বিভিন্ন বাহিনীর কাছে থাকা অস্ত্র তারা তার কাছে সমর্পণ করেছিল। সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন করতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যদি আমাদের মাঝে ফিরে না আসতেন, তাহলে বাঙালি জাতির ভাগ্যে কী ঘটতো, কী যে ভয়াবহ অবস্থা হতো, সেটি ভাবাও যায় না।

তিনি বলেন, সার্বিক বিবেচনায়, বঙ্গবন্ধুর নামেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সেই মহানায়ক, তিনি অনুপস্থিত, তিনি নাই। তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড। তখন জাতির তীব্র প্রতীক্ষা, মানুষ তার মুক্তির জন্য মানত করেছে, রোজা রেখেছে, তারা দোয়া করেছে, এটাই ছিল তখনকার পরিস্থিতি। কাজেই, বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসার কারণেই সাড়ে তিন বছর সরকার পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন। এ সময়ে তিনি বাংলাদেশকে একটা অবস্থানে দাঁড় করে গিয়েছিলেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তার হাতের স্পর্শ রয়েছে।

এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করে। সার্বভৌমত্ব সমুন্নত ও নিরঙ্কুশ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ফিরে না আসলে বাংলাদেশ থেকে মিত্রবাহিনীর শান্তিপূর্ণ চলে যাওয়া সহজ হতো না। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর অনেক উন্নত রাষ্ট্রে আমেরিকার সৈন্য বাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে অন্য রাষ্ট্রের এক প্লাটুন সৈন্যের উপস্থিতিও সেই দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি নেতিবাচক।

জাতির জনক স্বদেশে ফিরে এসে দুই মাসের মধ্যে আমাদের স্বাধীনতার জন্য রক্তদানকারী ভারতীয় মিত্র বাহিনীকে সসম্মানে ফেরত পাঠিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরঙ্কুশ করেছেন, এটি এই দিবসের সবচেয়ে বড় তাৎপর্য বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন