শুরু হলো গৌরবের মাস ফেব্রুয়ারি | Daily Chandni Bazar শুরু হলো গৌরবের মাস ফেব্রুয়ারি | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১৪:২০
শুরু হলো গৌরবের মাস ফেব্রুয়ারি
অনলাইন ডেস্ক

শুরু হলো গৌরবের মাস ফেব্রুয়ারি

ভাষার মাস গৌরবের ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে। ১৯৫২ সালের এই মাসেই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষাকে রক্ষা করেন। মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার এই সংগ্রামে সেদিন ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে আসেন। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য এমন আন্দোলন বিরল। সেজন্য ফেব্রুয়ারি শুধু ভাষার মাস নয়, আত্মপ্রত্যয়ে উজ্জীবিত হওয়ার মাস, বাঙালির গর্ব-অহংকারেরও মাস।

শুরুটা ১৯৪৭ সালের পর। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার কৌশলে বাঙালি জনগোষ্ঠীর ভাষার ওপর প্রথম আঘাত হানে। মায়ের ভাষায় কথা বলাও তারা বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করে। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চায় উর্দুকে। কিন্তু বাংলার মানুষ সেই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে একবিন্দু পিছু হটেনি। মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে প্রতিদিন রাজপথে চলতে থাকে মিছিল-সমাবেশ। শুরু হয় বাংলাভাষা রক্ষার আন্দোলন। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অনেক চড়াই-উতরাই পার করে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। হানাদারদের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশের গুলিতে প্রাণ ঝরে ছাত্র-জনতার। বায়ান্নর আগুনঝরা সে দিনগুলো বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
মূলত সেই দিনগুলোর মধ্য দিয়েই বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আরও বেগবান হয়। তারই সূত্র ধরে এসেছিল ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।

এ মাসের প্রথম দিন থেকে ধ্বনিত হয় সেই অমর সংগীতের অমিয় বাণী ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি...’। বাঙালি জাতি পুরো মাসে ভালোবাসা জানাবে তাদের, যারা ভাষার জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলেন।

ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন এবং একাত্তরে নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বস্তুত ফেব্রুয়ারি মাস একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল দিক। কারণ, এ মাসে পৃথিবীতে একমাত্র জাতি হিসেবে বাঙালিরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন।

ভাষার জন্য এই আত্মত্যাগ পৃথিবীতে বিরল। এই আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। এদিন জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করে। তারপর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।

ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই শুরু হচ্ছে বিভিন্ন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর শুরু হয়েছে।

এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই পর্দা উঠছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার। আজ বাংলা একাডেমিতে বিকেল ৩টায় এ মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিপ্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু হবে কাল। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলমুক্তির ডাক দিয়ে ১৯৮৭ সালে শুরু উৎসবের। বাংলাদেশ পথ-নাটক পরিষদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজন করেছে এ পথ নাট্য উৎসবের। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ মাসে নানা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে।

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন