অপরাধ দমনে তথ্যপ্রযুক্তি-আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স | Daily Chandni Bazar অপরাধ দমনে তথ্যপ্রযুক্তি-আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১৫:৫২
অপরাধ দমনে তথ্যপ্রযুক্তি-আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
অনলাইন ডেস্ক

অপরাধ দমনে তথ্যপ্রযুক্তি-আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স

‘শান্তি শপথে বলীয়ান’ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মাত্র ১২টি থানা এবং সাড়ে ৬ হাজার জনবল নিয়ে গঠিত হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এরপর একে একে কেটে গেছে ৪৭ বছর। ৪৮ বছরে পদার্পণ করেছে ডিএমপি। ১২টি থানা এখন ৫০টিতে এবং সাড়ে ৬ হাজার জনবল এখন ৩৪ হাজারে পরিণত হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে কাজের পরিধি বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ডিএমপিকে।

প্রতিষ্ঠাকালীন ডিএমপিতে ছিল না কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া। কিন্তু আধুনিকায়নের যুগে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহর পরিণত হতে থাকে জনবহুল শহরে। বাড়তে থাকে অপরাধের ধরন। আর সেসব মোকাবিলা এবং প্রতিরোধে পর্যায়ক্রমে গঠন করা হয় নতুন নতুন ইউনিট।

ডিএমপি জানায়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেটাভার্স, ওয়েব-৩ প্রযুক্তি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করেছে ডিএমপি। উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ টিম ডিএমপি হবে ঢাকাবাসীর গৌরবময় সেবা প্রদানের ‘স্মার্ট ডিএমপি’।

ডিএমপিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে যুক্ত ডায়নামিক রেসপন্স ইন্টিলিজেন্ট মনিটরিং সিস্টেম (ডিআরআইএমএস) ও সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস), সাসপেক্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (এসআইভিএস), ফেস ম্যাচিং, সিআইএ ল্যাব, আইপি ট্র্যাকার, সাইবার বুলিং অ্যান্ড ক্রাইম মনিটরিং সিস্টেম, ওয়ান স্টপ সার্ভিস, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেম, হ্যালো সিটি অ্যাপ, সিডিএমএস ও পিআইএমএস চালু করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ডিএমপিকে একটি যুগোপযোগী, দক্ষ ও জনবান্ধব বাহিনীতে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ডিএমপির সাফল্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং ও উঠান বৈঠকের মতো সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে ডিএমপিতে ৫৭টি বিভাগ ও ৫০টি থানা রয়েছে। ১ জন পুলিশ কমিশনার, ৬ জন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, ১২ জন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, ৫৭ জন উপ-পুলিশ কমিশনারসহ প্রায় ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য কর্মরত।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মেগাসিটি ঢাকায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস করেন। অনেক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কূটনৈতিক মিশনসমূহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এ মহানগরীতে অবস্থিত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন, ভিআইপি গমনাগমন, ব্যবসার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরবাসীর আস্থা ও নির্ভরতা অর্জনে সফল হয়েছে।

সাইবার অপরাধ ও জঙ্গি দমনসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে। ২০২২ সালে ডিএমপি সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত ১৭১টি মামলায় ১১৫ জন, ৩৫টি মামলায় ৮৭ জন জঙ্গি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৬ হাজার ৩৫টি মামলায় ২১ হাজার ৯৮০ জন, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংক্রান্ত মামলায় ৪১০ জন, নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত ২ হাজার ১০টি মামলায় ১ হাজার ৭০৯ জন, ১৬৯টি চোরাচালান মামলায় শতাধিক আসামিকে গ্রেফতার করেছে।

এছাড়াও ২০২২ সালে ১৩ হাজার ২৯১ দশমিক ৫ কেজি গাঁজা, ৫৫ কেজি হেরোইন, ৪০ লাখ ৯৩ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা, ৫৬ হাজার ৭৯৪ ক্যান বিয়ার, ৫১ হাজার ২৫৭ বোতল ফেনসিডিল, ৮ হাজার ২৫ বোতল বিদেশি মদসহ অন্যান্য নতুন নতুন ভয়ংকর মাদকদ্রব্য, ৬৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৫২ রাউন্ড গুলি, ৪ হাজার ২৬৮ কেজি বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করেছে।

সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী আইন অমান্যকারী যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে প্রায় দুই লাখ ৬৪ হাজার ই-প্রসিকিউশন দায়ের ও প্রায় ৫৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে।

ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন ২০২২ সালে ২ হাজার ৩৭৭ জন নারী ও শিশুকে সেবা প্রদান করেছে। ঢাকা মহানগরীতে প্রতি রাতে বিভিন্ন পদমর্যাদার প্রায় ৮ হাজার পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন। অপরাধ দমন ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অংশ হিসেবে ঢাকা শহরে দেড় হাজারেরও অধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করে সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন ডিএমপির সদস্যরা।

৪৮তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক নগরবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘সম্প্রতি প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ বেড়েছে। সাইবার ক্রাইম যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে প্রতারণার যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলোও প্রযুক্তির ব্যবহারে হচ্ছে। এসব অপরাধ দমনে আমাদের সাইবার ইউনিটকে আরও বেশি শক্তিশালী করা হয়েছে। ডিএমপির ডিবিতে একটি উন্নত প্রযুক্তির আধুনিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা নগরীতে অপরাধপ্রবণ যেসব এলাকা রয়েছে সেসব এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ অভিযাত্রায় ডিএমপি ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করছে। সর্বশেষ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সহজে ও দ্রুত নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে ডিএমপি।’

ডিএমপির ৪৮তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আয়োজন

নানান আনুষ্ঠানিকতায় শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) উদযাপিত হবে ডিএমপির ৪৮তম প্রতিষ্ঠা দিবস। ‘শান্তি শপথে বলীয়ান’ এ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে রাজধানী ঢাকার জননিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছে ডিএমপি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠার অভিব্যক্তি প্রকাশ ও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালে ১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হওয়া বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ এ ইউনিট সময়ের পরিক্রমায় মহানগরবাসীর নিরাপত্তা বিধানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

শনিবার বিকেল ৩টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে শুরু হবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৮তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানমালা। শোভাযাত্রায় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সব স্তরের পুলিশ সদস্য অংশগ্রহণ করবেন। শোভাযাত্রায় যুক্ত থাকবে ডিএমপির সুসজ্জিত অশ্বারোহী ও ব্যান্ড দল, ডগ স্কোয়াড, সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটসহ অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন উপস্থিত থাকবেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিকেল ৪টায় কেক কেটে প্রতিষ্ঠা দিবসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটরিয়ামে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে ডিএমপির সার্বিক কার্যক্রমের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে।

প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। এছাড়া ডিএমপি সদরদপ্তর থেকে প্রকাশ করা হবে বিশেষ ম্যাগাজিন ‘আস্থা’।

ডিএমপির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন