হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনায় ছিলেন খাদিম রাজা ও রাও ফরমান আলী | Daily Chandni Bazar হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনায় ছিলেন খাদিম রাজা ও রাও ফরমান আলী | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২৫ মার্চ, ২০২৩ ১০:৫১
হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনায় ছিলেন খাদিম রাজা ও রাও ফরমান আলী
অনলাইন ডেস্ক

হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনায় ছিলেন খাদিম রাজা ও রাও ফরমান আলী

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ঢাকার নিরীহ মানুষ। ঠিক এই সময় ক্যান্টনমেন্ট থেকে জিপ-ট্রাক বোঝাই করে পাকিস্তানি সৈন্যরা আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে ওঠে তাদের আধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার। তাদের জলপাই রঙের ট্যাংকগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ-ইপিআর ব্যারাকের দিকে ধেয়ে যেতে থাকে। রচিত হয় এক কুখ্যাত ইতিহাস।

ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদরদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে তখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে লাশের পর লাশ। মধ্যরাতের ঢাকা তখন যেন লাশের শহর।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কিত এই হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনায় ছিলেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা। তারা হলেন, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। তাদের পরিকল্পনায় সংঘটিত হয়েছিল এই গণহত্যা।

তবে এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে ২০১২ সালে, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সেই আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো ‘অপারেশন সার্চলাইট’ সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ হয়।

অপারেশন সার্চলাইট কীভাবে হয়েছিল, সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লেখেন, ১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন।

টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের (ইয়াহিয়া খান) সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি।

রাজা আরও লেখেন, আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।

এর পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন ‘অপারেশন সার্চলাইট’।

খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও গণহত্যার তথ্য পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তারা যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়— ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন