সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে | Daily Chandni Bazar সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১২ মে, ২০২৩ ১১:৫১
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে

সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর সহযোগিতায় ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে চ্যাটাম হাউস কমিশন অন ইউনিভার্সাল হেলথ এর কো-চেয়ার হেলেন ক্লার্ক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ধনী দেশগুলোকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে ফান্ড (অর্থায়ন) দিতে হবে।

তিনি বলেন, বহু দেশ এখনো পিছিয়ে আছে। তাদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন। একটা ভালো ফান্ড তৈরি করে যে সমস্ত এলাকা এখনো উন্নত না বা যেসব এলাকা এখনো স্বাস্থ্যের দিকে খুব বেশি এগুতে পারেনি তাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে সহযোগিতা করা উচিত। কারণ স্বাস্থ্যটাই হচ্ছে সকল সুখের মূল।

অনুষ্ঠানটির দুটি অংশ ছিল। প্রথম অংশে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও বিশেষজ্ঞরা তাদের কাছে করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

অনুষ্ঠানের এ অংশ পরিচালনা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালকের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য বিষয়ক চ্যাটাম হাউস কমিশনের কমিশনার সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

এসময় সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে একটা পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইউনিভার্সাল হেলথকেয়ার এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার এবং আন্তর্জাতিকভাবে একটা প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে ফেলা উচিত।

তিনি বলেন, তাহলে কোন দেশের জন্য কোনটা বেশি প্রয়োজন, সেটা সুনির্দিষ্ট করা যাবে এবং সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এটা সবাইকে একসঙ্গে করা দরকার।

অনুষ্ঠানে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও ৩০ প্রকারের ওষুধ প্রদান, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ইনসুলিন প্রদান, নতুন নার্স ও চিকিৎসক নিয়োগ, স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ, মায়েদের মাতৃত্বকালীন ও প্রসবকালীন সেবা প্রদান, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিভিন্ন জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো, উন্নত সরঞ্জাম ব্যবহার করে চিকিৎসারসেবার মান বৃদ্ধি, বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ, হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারপ্রধান বলেন, এভাবে আমরা মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাচ্ছি। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এসব ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটারি ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা শুধু চিকিৎসা বা ওষুধ খাওয়ানো না, সেই সঙ্গে তার খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সার্বিক ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্যখাতে সরকারের সফলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ভুলে গেলে চলবে না ছোট্ট একটা ভুখণ্ড, বিশাল জনগোষ্ঠী, সামাল দেওয়া খুবই কষ্ট। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, শুধু আমাদের স্বাস্থ্যসেবাই না, আমাদের সমস্ত কাজ আমরা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ তাদের কাছে যেন পৌঁছায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে থাকি।

স্বাস্থ্যখাতে বাজেট-বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকবার বাজেটে বিরাট অংশ আমরা দেই। জিডিপিতে ২ শতাংশ ধরলেও টাকা অঙ্কে আমরা অনেক বেশি সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্য খাতের বিকাশে মেডিকেল সরঞ্জাম আমদানিতে ট্যাক্স কমানো এবং শিশুদের চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে কর মওকুফের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।

দারিদ্র্যবিমোচনে সরকারের নানা পদক্ষেপে এবং সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্যবিমোচনে আমরা অনেক সফল। ২০০৬ সালে যখন ৪১ শতাংশ দারিদ্র্য ছিল। এটি আমরা ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এসেছি। আমাদের চরম দারিদ্র্য যেটা ছিল ২৫ শতাংশের ওপরে, সেটা কিন্তু ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে, এটাও থাকবে না। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে সবার জন্য এমন ব্যবস্থা নিচ্ছি। কাজেই কোনো মানুষই আর দরিদ্র থাকবে না।

সেবা কার্যক্রম তদারকি করতে জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বাড়িয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ড. বর্ধন জং রানা এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট প্রমুখ।

এতে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের সদস্য ও যুব নেতৃবৃন্দসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা এবং পরিষেবা সরবরাহ নিশ্চিতকরণ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলোর ব্যপারে আলোচনা ও সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়। এ অংশে দুটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। একটি ‘ইমপ্রুভিং অ্যাকসেস টু অ্যাফোরডেবল অ্যান্ড কোয়ালিটি পিএইচসি ফর ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ’ এবং অন্যটি ‘হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং ফর এক্সিলারেটিং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ’ বিষয়ে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও, বিশ্বব্যাংক, সূচনা ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন এবং লন্ডনের চ্যাটাম হাউসের মতো বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন