বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীঃ জায়গার অভাবে বিনিয়োগ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা | Daily Chandni Bazar বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীঃ জায়গার অভাবে বিনিয়োগ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৩ মে, ২০২৩ ২২:২৬
বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীঃ জায়গার অভাবে বিনিয়োগ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা
একনেকে ঝুলে আছে ২য় বিসিক শিল্পনগরী প্রকল্প
ষ্টাফ রিপোর্টার

বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীঃ জায়গার অভাবে
বিনিয়োগ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা

বগুড়া বিসিক শিল্প নগরী যেখানে বছরে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় হাজার কোটি টাকার পণ্য। দেশের চাহিদা পূরণ করে এই বিসিকের পণ্য যাচ্ছে বিদেশের মাটিতেও। কিন্তু উত্তরের বাকি ১৫ জেলার ১৫২টি শিল্প ইউনিট ফাঁকা পরে থাকলেও সম্ভাবনাময় বগুড়া বিসিকে জায়গার অভাবে বিনিয়োগ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন ধরে একনেকে ঝুলে আছে দ্বিতীয় বিসিক শিল্প পার্ক। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে দ্রুতই আশার আলো দেখতে পারে এই প্রকল্প।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, টিউবওয়েল, সেচপাম্প, লায়নার, পিস্টন, ফিল্টারসহ দেশের কৃষি যন্ত্রাংশের প্রায় ৭০ ভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে বগুড়া বিসিক থেকে। কৃষি যন্ত্রাংশসহ বিসিক থেকে সব মিলিয়ে বছরে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় হাজার কোটি টাকার পণ্য। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিরামহীনভাবে নানা প্রক্রিয়ায় হাড়ি, পাতিল, বাসন-কোসন তৈরিতে ব্যস্ত এখানকার শ্রমিকরা যাদের কাজের দক্ষতাও বেশ। নারী পুরুষ মিলিয়ে বগুড়ার বিসিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষের।
বিসিকে প্রায় ১৭ বছর ধরে কাজ করা আব্দুল হান্নান জানান, বগুড়ার বিসিকে এই কারখানাগুলোর কারণে তাদের মতো কয়েক হাজার মানুষের রুজি রুটির ঠিকানা হয়েছে। কাজের দক্ষতা ও ধরণের উপর মাসিক প্রায় ১৫ হাজার টাকা থেকে তাদের বেতন ২৮ হাজার টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন। এছাড়াও রয়েছে ওভারটাইমের সুযোগ। পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ সুখেই আছে।
বগুড়া বিসিকে পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে শত শত নারী শ্রমিক। তাদেরই একজন শিউলি বেগম জানালেন তার কর্মে সংসারের অর্থনীতির চাকা ইতিবাচকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। তিনি বলেন, তার স্বামীর একার উপার্জনে সংসারের খরচ মিটিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছিলো। কিন্তু বিসিকের একটি ওয়ার্কশপে সম্মানের সাথে কাজ করে আজ সে সাবলম্বী। আর বিসিকের এই ক্ষেত্র যদি আরো বাড়ানো যায় তাহলে তার মতো আরও শত শত নারী খুঁজে পাবে সাবলম্বী হওয়ার পথ। 
সরেজমিনে বগুড়া বিসিক ঘুরে দেখা যায়, আধুনিকায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ষাটের দশকের সনাতন পদ্ধতি আর মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাতি বিদায় দিয়ে বগুড়া বিসিকের বিভিন্ন কারখানায় এখন বসানো হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। ইতিমধ্যেই কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সংযোজন করছে ইনডাকশন ফার্নিশ, সিএনসি, ভার্টিকেল সিলিং, শর্ট ব্লাস্টের মতো আধুনিক যন্ত্রপাতি। যেখানে জ্বালানী হিসেবে কয়লার প্রয়োজনও হবেনা তেমনি থাকবেনা পরিবেশ দূষণের বালাই।
এ প্রসঙ্গে মেসার্স উত্তরা মেটাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ বগুড়ার সত্ত্বাধিকারী আব্দুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কারিগর ও যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নের মাধ্যমে বগুড়ার এই বিসিক থেকে আরো রাজস্ব অর্জন সম্ভব। বগুড়ার বিসিকের পণ্য এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে কিন্তু দক্ষ কর্মী কিংবা আধুনিক যন্ত্রপাতি যদি এসময় সংযোজন না করা হয় তাহলে পিছিয়ে পরতে হবে অনেকটাই। 
এদিকে সম্ভাবনাময় এই শিল্পনগরীর ভেতরে পানি নিষ্কাশনের জন্য নতুন ড্রেন নির্মাণ করা হলেও সেগুলো অকার্যকর। আর রাস্তাঘাটের অবস্থা একেবারে নাজুক। বিসিক শিল্প নগরীর অভ্যন্তরে ড্রেনেজ সিস্টেম আর রাস্তাঘাটগুলো সচল করার দাবি দীর্ঘদিনের। একইসাথে এখানে বিনিয়োগের পর্যাপ্ত সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও প্লট বরাদ্দ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। তাই দ্রুত দ্বিতীয় বিসিক শিল্প নগরীর বাস্তবায়ন চান তারা।
এ প্রসঙ্গে এজিজিআই ফিটিংস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল হক ও মফিজ উদ্দিন আহমেদ এন্ড সন্স এর পরিচালক কামাল ইনেনু তাদের হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, বগুড়া বিসিক সারাদেশের মাঝে অন্যতম একটি ব্যবসায়ীক ক্ষেত্র যা দেশের কৃষিযন্ত্রাংশের অধিকাংশ অংশই উৎপাদন করছে অথচ জায়গার অভাবে এখানে নতুন করে তারা বিনিয়োগ করতে পারছেন না। প্লট হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও অত্যন্ত জটিল এবং ভোগান্তির। দেশের অনেক বিসিক অকার্যকর হয়ে পরে থাকলেও বগুড়া বিসিকের মতো এমন সম্ভবনাময় স্থান আজ অজানা কারণে অবহেলিত। কবে স্থাপন হবে ২য় বিসিক শিল্পনগরী তাও জানা নেই তাদের। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কাঁচামালের উর্ধ্বমুখী বাজারে একসময় পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে না পারার দরুণ লোকসান গুণতে হবে তাদের।
সার্বিক প্রসঙ্গে বিসিক বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক একেএম মাহফুজুর রহমান এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, বগুড়া বিসিক শিল্পনগরী ভৌগোলিক কারণেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শুধু তাই নয় দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে বিসিক। তাইতো সকল প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে একনেকে অনুমোদন পেলেই ৩০০ একর জায়গায় জুরে বাস্তবায়ন হবে দ্বিতীয় বিসিক শিল্প পার্ক। এছাড়াও তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিসিকের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করা হয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে সমাধানযোগ্য সকল সমস্যায় এখানকার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে তিনি সমাধানের উদ্যোগ নিবেন বলে জানান।  
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে প্রথমে ১৪ একর ৫০ শতক পরে ১৯৮০ সালে বগুড়া বিসিকে যোগ হয় আরো ১৮ একর ৬৭ শতক জমি। তারপরেও জায়গার অভাবে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এখানে। অন্যদিকে উত্তরের জনপদ রংপুর ও রাজশাহীর ১৫ জেলার বিসিক শিল্প নগরীতে বন্ধ হয়েছে ৭১টি শিল্প ইউনিট আর ৮১টি শিল্প ইউনিটে এখনো শুরু হয়নি নির্মাণ কাজ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে বগুড়ার মতো সম্ভাবনাময় একটি জেলায় বিনিয়োগকারীরা জায়গার অভাবে এগিয়ে নিতে পারছে না তাদের ব্যবসা এটি সত্যিই হতাশার। তবে সব জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে দ্বিতীয় বিসিক শিল্প পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে এমন আশায় বুক বেঁধেছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। 

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন