সুদানে দুপক্ষের সংঘাতে জনপ্রিয় গায়িকা নিহত | Daily Chandni Bazar সুদানে দুপক্ষের সংঘাতে জনপ্রিয় গায়িকা নিহত | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৫ মে, ২০২৩ ১৫:৪৮
সুদানে দুপক্ষের সংঘাতে জনপ্রিয় গায়িকা নিহত
অনলাইন ডেস্ক

সুদানে দুপক্ষের সংঘাতে জনপ্রিয় গায়িকা নিহত

সুদানের ওমদুরমান শহরে সেনাবাহিনী এবং প্যারামিলিটারি র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘাতে দেশটির জনপ্রিয় গায়িকা শাদেন গার্দুদ নিহত হয়েছেন। শুক্রবার ওমদুরমান এবং খার্তুম শহরে তীব্র লড়াইয়ের সময় নিহত হন শাদেন গার্দুদ।

এদিকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য একটি চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও শনিবারও সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে। রোববার সৌদি আরবে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আবারও আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। গত ১৫ এপ্রিল দেশটিতে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রচণ্ড লড়াইয়ের সাক্ষী ওমদুরমান শহর। দুই পক্ষ বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিরতির মধ্যেও সংঘাতে জড়িয়েছে এবং তারা কেউই আপস করতে ইচ্ছুক নয় বলেই মনে হচ্ছে।

এল-হাশমাব এলাকায় বাস করতেন গার্দুদ। ওই এলাকা ন্যাশনাল টিভি এবং রেডিও ভবনের কাছে। মূলত দুপক্ষের লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে শহরটি। ওমদুরমান একটি উল্লেখযোগ্য তাৎপর্যপূর্ণ শহর। এই শহরের নামে ওদুরমান সংগীতের নামকরণ করা হয়েছে। যা মিশরীয় এবং ইউরোপীয় অর্কেস্ট্রাল এবং সুদানের সংগীতের ছন্দ ও সুরের মিশ্রিত একটি রূপ। প্রথমবার রেডিও ওমদুরমানে এ ধরনের সংগীত প্রচারিত হয়।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে গার্দুদের এক স্বজন তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এছাড়া আরও কিছু পোস্ট থেকে জানা যায় যে, বাড়িতে মর্টারের আঘাতে প্রাণ হারান গার্দুদ। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে সামাজিক মাধ্যমের এক পোস্টে গার্দুদ লেখেন যে, আমরা ২৫ দিন ধরে আমাদের বাড়িতে আটকা পড়ে আছি। আমরা ক্ষুধার্ত এবং তীব্র আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। এদিকে দুপক্ষের সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৯ শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এছাড়া আরও কয়েক লাখ মানুষ আশপাশের দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে।

কয়েক হাজার বিদেশী নাগরিককে যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধ বিমান পাঠিয়ে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। আফ্রিকার সাহেল এবং হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলটি এমনিতেই বহুদিন ধরেই যুদ্ধ-বিগ্রহে বিপর্যস্ত। সুদানের সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা আরো ভঙ্গুর হয়ে পড়বে বলে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

সুদানের এই লড়াইকে এরই মধ্যে অনেকেই পুরাদস্তুর গৃহযুদ্ধ বলে বর্ণনা করতে শুরু করেছেন। আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং সেই সঙ্গে পূর্ব এবং হর্ন অব আফ্রিকার আঞ্চলিক জোট ইগাড শুরু থেকেই মীমাংসার চেষ্টা করছে। কিন্তু আফ্রিকার নতুন এই যুদ্ধ বন্ধে সবচেয়ে তৎপর হয়েছে সৌদি আরব।

অন্য সব পক্ষের তুলনায় সৌদির মধ্যস্থতার উদ্যোগ এক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। একদম শুরুতে ইগাড জোট মীমাংসার উদ্যোগ নেয়। তারা দুপক্ষকে সাউথ সুদানের রাজধানীতে বসার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।

কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে সুদানের বিবাদমান দুই পক্ষই সৌদি আরবের মধ্যস্থতা নিয়ে আগ্রহী। কারণ সুদান ও সৌদি আরবের সম্পর্কের ঐতিহাসিক একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। এক অর্থে সুদান অনেকটাই ব্যতিক্রমী একটি দেশ। এটি আফ্রিকার দেশ কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো এদেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি, বিশেষ করে সৌদি আরব।

সুদান একই সঙ্গে সাহেল, হর্ন অব আফ্রিকা এবং লোহিত সাগর অঞ্চলের অংশ। কিন্তু তারপরও সুদানের সমাজ ও রাষ্ট্রের একটি বড় অংশের বিশেষ করে আরবি ভাষাভাষী সুদানি শাসক এবং অভিজাত শ্রেণীর সঙ্গে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বের প্রধান শরিক ছিল সুদান। বহু সুদানি সৈন্য এবং আরএনএফ মিলিশিয়া ইয়েমেনে যুদ্ধ করেছে। যে চারটি দেশের মধ্যস্থতায় গত বছর সুদানে সামরিক শাসন থেকে বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে চুক্তি হয়েছে তাতে আফ্রিকার কোনো দেশ না থাকলেও রয়েছে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

সৌদি আরব এবং সেই সঙ্গে আরব আমিরাত মনে করে সুদানের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক সংস্কারের প্রকল্পটি তাদের। সুতরাং এই প্রকল্প ভেস্তে যাক সেটা তারা কোনোভাবে চায়না। ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ছাড়াও সুদানের সংঘাত নিয়ে সৌদি আরবের বিশেষ তৎপরতার পেছনে প্রধানত রয়েছে তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ। একই কথা আরব আমিরাতের বেলাতেও প্রযোজ্য।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন