চুরির পর বাড়ি ফিরছিল চোর। ব্যাগের ভেতর চোরাই সোনা আর ডলার নিয়ে রাতের শেষ ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল স্টেশনে। কিন্তু চুরির জিনিস কপালে সইলো না! নির্জন স্টেশনে চোরকে মারধর করে তার কাছ থেকে ওই সোনা আর ডলার লুট করে পালায় ছিনতাইকারী। সব হারিয়ে রীতিমতো কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যায় চোর।
এখানেও শেষ নয় ঘটনা। চোরাই মাল হারিয়ে ফেললেও চুরির অপরাধ তো আর মাফ হয়ে যায়নি। ঘটনাক্রমে পুলিশের জালে ধরা পড়ে সেই চোর। আর তার জবানবন্দির সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় ‘চোরের ওপর বাটপারি’ করা সেই ছিনতাইকারীকেও। সম্প্রতি এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ঘটনাটি কয়েকদিন আগের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ এলাকার কুখ্যাত চোর শেখ রাকেশ বেরিয়েছিল তার কাজে। দিনের বেলায় সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়ে দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুরের একটি বাড়িতে। ওই বাড়ির বৃদ্ধ বাসিন্দার মেয়ে ও জামাই কিছুদিন আগে এসেছিলেন আমেরিকা থেকে। যাওয়ার আগে শ্বশুরকে কিছু ডলার দিয়ে যান জামাই। বৃদ্ধ সেগুলো সযত্নে লকারে তুলে রেখেছিলেন। আলমারিতে ছিল লক্ষাধিক টাকার সোনার গহনাও।
কিন্তু সবার অলক্ষ্যে দরজার তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে আলমারি থেকে ওই গহনা ও লকারে রাখা ৬০ ডলার নিয়ে পালিয়ে যায় চোর রাকেশ। এরপর নিউ আলিপুর থেকে সরাসরি স্টেশনে না গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তারাতলায় গিয়ে কয়েকবার বাস পাল্টে পৌঁছে যায় আক্রা সন্তোষপুরে। ততক্ষণে রাত হয়ে গেছে। সন্তোষপুর স্টেশনে নির্জন একটি জায়গায় বসে শেষ ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল রাকেশ। সময় তখন রাত সোয়া ১১টার পেরিয়েছে।
হঠাৎ রাকেশের পেছনে এসে দাঁড়ায় এক ব্যক্তি। ওই লোক প্রথমে নিজেকে ‘পুলিশ’ পরিচয় দিয়ে তার ব্যাগ তল্লাশি করতে চায়। রাকেশ তাতে বাধা দিলে তাকে রীতিমতো মারধর করতে থাকে সে। গালিগালাজ করে ব্যাগটি কেড়ে নেয়। ব্যাগের ভেতর সোনার গহনা ও ডলার দেখে তাকে ফের মারধর করে প্রায় অচেতন করে ফেলে। এরপর চোরের কাছ থেকে ব্যাগ লুট করে পালিয়ে যায় সেই ছিনতাইকারী।
তখন আর কী করার! শেষ ট্রেনে চড়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফেরে রাকেশ।
এই চুরির ব্যাপারে প্রথমে নিউ আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। চুরির তদন্ত শুরু করে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। চুরির পদ্ধতি ও সিসিটিভির ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ রাকেশের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু চুরির জিনিসগুলো কোথায়- সেই প্রশ্ন করতেই ফের পুলিশের সামনেই কাঁদতে থাকে সে। কেঁদে কেঁদেই ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়ার কথা জানায়।
রাকেশের কথা প্রথমে গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেননি। কিন্তু সন্তোষপুর স্টেশনে গিয়ে তদন্ত করে তারা নিশ্চিত হন। স্টেশন ও তার আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে গোয়েন্দারা ছিনতাইকারী রাজা সর্দারকে শনাক্ত করেন। পরে তাকে রবীন্দ্রনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাজা নিজেও চুরি করেন। নিউ আলিপুর থেকে চুরি হওয়া জিনিসগুলো তার কাছ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন