সিগারেটের সূত্র ধরে হত্যা রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই | Daily Chandni Bazar সিগারেটের সূত্র ধরে হত্যা রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২৫ জুন, ২০২৩ ১৫:০৭
সিগারেটের সূত্র ধরে হত্যা রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই
অনলাইন ডেস্ক

সিগারেটের সূত্র ধরে হত্যা রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই

বিদেশ যেতে টাকা জোগাড় করছিলেন মো. হাফেজ। এ জন্য দুইটা অটোরিকশা চুরি করে বিক্রি করেন। এরপর বিমল চন্দ্র মন্ডল নামের একজনের বাসায় চুরি করতে গিয়ে তাকে হত্যা করেন হাফেজ। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয় দুইটি সিগারেটের শেষাংশের সূত্র ধরে।

এরই মধ্যে মো. হাফেজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঢাকার আশুলিয়া থানার বিমল চন্দ্র হত্যার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ২২ জুন বিকেলে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রোববার (২৫ জুন) পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা।

তিনি বলেন, বিমল চন্দ্র মন্ডল সপরিবারে আশুলিয়ার জামগড়া মনির মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতের। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় বিমল সবসময় বাসায় থাকতেন। জীবিকার তাগিয়ে তার স্ত্রী এবং কন্যা পোশক কারখানায় চাকরি করেন। গত ১৬ এপ্রিল প্রতিদিনের মতো বিমলের স্ত্রী এবং কন্যা পোশাক কারখানায় কাজে যান। ফলে ওইদিন বিমল একাই বাসায় ছিলেন।

ওইদিন অফিস ছুটি হওয়ার পর বিকেলে সাড়ে ৪টায় বিমলের মেয়ে পূর্ণিমা রানী মন্ডল বাসায় ফিরে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। সেসময় তার মুখে কাপড় কাটার কাঁচি (সিজার) ঢোকানো ছিল।

এই ঘটনায় বিমলের স্ত্রী পারুল মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করা হয়। ১৭ এপ্রিল থেকে ৪ জুন পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। এরপর ৪ জুন পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার পায়।

নিহত বিমলের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা জানান, হক্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার ৬ মাস আগে বিমল স্ট্রোক করেন। তখন থেকে তিনি ধূমপান ছেড়ে দেন। কিন্তু হত্যার দিন বিমলের বাসায় সিগারেটের দুইটি শেষাংশ পাওয়া যায়। সিগারেটের ওই শেষাংশের সূত্র ধরেই তদন্ত এগোতে থাকে। বেশ কয়েকজনকে আনা হয় সন্দেহের তালিকায়। তার মধ্যে মো. হাফেজকে সন্দেহের তালিকায় প্রথমে রেখে তার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়।

তিনি জানান, তদন্তের এক পর্যায়ে পিবিআই তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২ জুন বিকেল ৫টার দিকে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে মো. হাফেজকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মো. হাফেজ জানান, বিমল ও হাফেজের স্ত্রী একই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। এর সুবাদে এবং একই এলাকায় পাশাপাশি বসবাস করায় হাফেজ মাঝেমধ্যেই বিমলের বাসায় যাতায়াত করতেন।

ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টায় হাফেজ বিমলের বাসায় যান। তখন বাসায় বিমল একাই ছিলেন। হাফেজ ও বিমল একসঙ্গে টিভি দেখেন এবং খাওয়া-দাওয়া করেন। পরে সিগারেট আনতে বিমলকে বাসার নিচে দোকানে পাঠান হাফেজ।

পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা আরও বলেন, ওই সময়ে হাফেজ বিমলের স্ত্রী গহনা ও টাকা পয়সা খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। সিগারেট নিয়ে বাসায় এসে বিমল দেখেন ঘর অগোছালো করে হাফেজ কিছু খুঁজছেন। চুরির বিষয়টি বিমল দেখে ফেলায় হাফেজ টেবিলে থাকা কাপড় কাটার কাঁচি দিয়ে প্রথমে বিমলের গলায় ডান পাশে পোঁচ দেন। পরে বিমলের মুখে কাঁচি ঢুকিয়ে হত্যা করে বাসা থেকে একজোড়া সোনা বাঁধানো শাখা, দুই জোড়া কানের দুল এবং দুই জোড়া চুড়িসহ নগদ ৯ হাজার ৫২০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।

গ্রেফতারের পরদিন হাফেজকে আদালতে পাঠানো হলে তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, হাফেজ বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করছিলেন। এর আগে টাকা জোগাড় করতে দুইটি অটোরিকশা চুরি করে বিক্রি করেন। সবশেষ বিমলের বাসায় চুরি করতে গিয়ে তাকে হত্যা করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, হাফেজের চুরি করা সোনার গহনা বিক্রিতে যারা সাহায্য করেছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন