নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্যপণ্যের মজুত ঠেকাতে যাবজ্জীবনের বিধান রেখে নতুন আইন পাস হয়েছে জাতীয় সংসদে। বুধবার সংসদে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল, ২০২৩’ পাস হয়।
নতুন এই আইনে খাদ্য বাজারজাত করার ক্ষেত্রে প্রকৃত নাম পরিবর্তন করে কোনো কাল্পনিক নামে বিক্রি করলেও দুই বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তবে নতুন এই আইনটির অপব্যবহারের সুযোগ থাকা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ।
মূলত ১৯৫৬ সালের ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্ট এবং ১৯৭৯ সালের ফুডগ্রেইনস সাপ্লাই (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাকটিভিটি) অর্ডিন্যান্স বাতিল করে নতুন এ আইন হলো।
গত এপ্রিলে মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া প্রস্তাবিত আইনটি বুধবার সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে এটি আইন হিসেবে কার্যকর হবে।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ আইনটির অপব্যবহারের সুযোগ থাকা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটি ভয়াবহ আইন। এই আইনের আওতায় যে কাউকে যে কোনো সময়ে ধরা যাবে। ঘুষের একটা মহোৎসব শুরু হবে দেশে। যে কাউকে ধরে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়ে দেয়া যাবে। এই আইনের ফলে দেশের কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে।
সমালোচনার জবাবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদার বলেন, প্রকৃত মজুতদারদের চিহ্নিত করা সহজ বিষয়। কৃষকদের ওপর এই আইন প্রয়োগের কোনো আশঙ্কা নেই। এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালায় এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার করা হবে।
খাদ্যদ্রব্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- যে কোনো প্রকার দানাদার খাদ্যদ্রব্য, যথা চাল, ধান, গম, আটা, ভুট্টা ইত্যাদি।
শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত পরিমাণের বেশি পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য মজুত করলে বা মজুত-সংক্রান্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা অমান্য করলে তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারা ও অর্থদণ্ড।
খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বিপণন সংক্রান্ত কিছু অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ওই রূপ জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করলে তা হবে অপরাধ। খাদ্যদ্রব্যের মধ্য থেকে স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণ বা পরিবর্তন করে উৎপাদন বা বিপণন করলে সেটিও অপরাধ হবে।
এ ছাড়া খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করে উৎপাদন ও বিপণন করলে সেটিও হবে অপরাধ।
লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা চললেও তা অপরাধ হবে। আর এসব অপরাধের জন্য ২ বছর কারাদণ্ড অথবা অন্যূন ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন–সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করলে, তা হবে একটি অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
নতুন আইন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত থাকবে। এই আদালত খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত নামে চিহ্নিত হবে। এই আইনের অধীন কিছু অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতেও করা যাবে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন