আইভি স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে ১০ গুণ, সংকটের আশঙ্কা | Daily Chandni Bazar আইভি স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে ১০ গুণ, সংকটের আশঙ্কা | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২ আগস্ট, ২০২৩ ১১:৪৮
আইভি স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে ১০ গুণ, সংকটের আশঙ্কা
অনলাইন ডেস্ক

আইভি স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে ১০ গুণ, সংকটের আশঙ্কা

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরকম পরিস্থিতি তারা এর আগে দেখেননি। ডেঙ্গুরোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট। বিশেষত আইভি স্যালাইন। এরই মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে এবং হাসপাতালগুলোতে স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে। ওষুধ ব্যবসায়ী, বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই মাসে ফ্লুইড স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিগগির হাসপাতালগুলো স্যালাইন সংকটে পড়তে পারে।

সারাদেশে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সদর হাসপাতালগুলোতে ওষুধ ও স্যালাইন সরবরাহ করে এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। তবে স্যালাইনের এখনো নিজস্ব উৎপাদন না থাকায় বিভিন্ন বেসরকারি ফার্মা কোম্পানি থেকে তা দাম দিয়ে সংগ্রহ করে হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ মুহূর্তে ডেঙ্গুরোগীদের জন্য স্যালাইনের অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ইডিসিএল। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে স্যালাইনের জোগান অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্তৃপক্ষ বলছে, উৎপাদন সংকটের কারণেই চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। আগামী ডিসেম্বর থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আইভি ফ্লুইড তথা স্যালাইন উৎপাদনে যাবে সরকার।

রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। ৫০০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন হাজারেরও বেশি। তাদের মধ্যে ডেঙ্গুরোগীই প্রায় ৫০০ জন। প্রতিদিন গড়ে দেড়শোর বেশি ডেঙ্গুরোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুগদা মেডিকেলের স্টোর রুমের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মচারী জানান, জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গুরোগীদের চাপ বাড়ায় স্যালাইনের ঘাটতি দেখা দেয়। পরে চাহিদা মতো স্যালাইন মজুত করা হয়। প্রতিদিন এক হাজার থেকে বারশো আইভি ফ্লুইড প্রয়োজন হচ্ছে। এখনো প্রায় ১৯ হাজারের মত স্যালাইন হাসপাতালের স্টকে আছে। আগামী ১৫ দিনেও ঘাটতি হবে না।

মুগদা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় তলায় নারী ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন মোসাম্মত শানু। তার বয়স ৪৫ বছর। সাতদিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। তিতবে এখন কিছুটা সুস্থ বোধ করলেও প্লাটিলেট বাড়ছে না। এ কারণে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্রও পাচ্ছেন না। প্রতিদিন গড়ে দুই ব্যাগ আইভি ফ্লুইড নিতে হচ্ছে তাকে। সব স্যালাইন হাসপাতালের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সোহরাওয়ার্দী ও মিডফোর্ডসহ একাধিক হাসপাতাল ঘুরে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে স্যালাইন সংকটের কথা জানা গেছে। রোগীদের আশঙ্কা, সরকারি খরচে দেওয়া আইভি ফ্লুইড সরবরাহ সংকটে শিগগির বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসায় আইভি ফ্লুইডের প্রয়োজনীতা বাড়ছে। আগে ইডিসিএলকে মাসে একবার স্যালাইনের চাহিদা দেওয়া হত। এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহে চাহিদা দিতে হচ্ছে। ১৫ হাজারের বেশি স্যালাইনের ব্যাগ এখনো মুজত আছে। এগুলো দিয়ে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ চলবে। ডেঙ্গুরোগীদের ৮০ ভাগেরই স্যালাইন লাগে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ায় স্যালাইনের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেছে।

এ বিষয়ে এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির বলেন, রোগীদের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ফ্লুইড প্রয়োজন হয়। যেমন- নরমাল স্যালাইন, ডিএনএস, হার্ডসন, প্লাজমাসল ইত্যাদি। কিন্তু ইডিসিএল নিজস্বভাবে স্যালাইন তৈরি করে না। সারাদেশে ইডিসিএলের পাঁচটি প্ল্যান্টের মধ্যে গোপালগঞ্জে একটি ইউনিট রয়েছে। যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশ কিছু ওষুধ তৈরি হচ্ছে। শিগগির আমরা সব ধরনের ফ্লুইড তৈরিতে যাবো। এরই মধ্যে মেশিন স্থাপন হয়েছে। সেপ্টেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রোডাকশন ট্রায়াল হবে। আশা করছি অক্টোবর নাগাদ উৎপাদনে যেতে পারবো।

ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের কারণে গড়ে কী পরিমাণ ফ্লুইডের চাহিদা বেড়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর ৬০ লাখ ব্যাগ স্যালাইনের চাহিদা ছিল। এরমধ্যে ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ব্যাগ দিতে পেরেছি। এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি ফ্লুইড লাগছে। ইডিসিএলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন না থাকায় বেরসকারি বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানি থেকে কিনে সারাদেশে হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ডেক্সট্রোজেন ৫ শতাংশ ও সোডিয়াম ক্লোরাইড দশমিক ৯ শতাংশের এক ব্যাগ ১০০০ মিলির স্যালাইন ৮৭ টাকা, বেবি স্যালাইন ৬৩ টাকা রাখা হচ্ছে। এভাবে ৫০০ মিলিসহ সব স্যালাইন স্বল্প দামে সব সরকারি হাসপাতালে সরবারহ করা হচ্ছে।

ইডিসিএল সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, দেশে ৩৭টি সরকারি মেডিকল কলেজ ছাড়াও হাসপাতালের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু স্যালাইন উৎপাদন সক্ষমতা বাড়েনি। আপাতত বেক্সিমকো, একমি, পপুলার, অপসোনিন, ওরিয়ন ও লিবরা এ ৬টি কোম্পানি থেকে স্যালাইন কিনে সরবরাহ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেসব হাসপাতালে স্যালাইনের চাহিদা বেশি তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাইরে থেকে কিনতে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) দেওয়া হচ্ছে।

ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ায় সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে স্যালাইনের যে সংকট তৈরি হয়েছে তা সহসা সমাধান হচ্ছে না বলে মনে করছে ইডিসিএল।

অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির বলেন, স্যালাইন তো আমরা উৎপাদন করি না। বেসরকারি ফার্মা কোম্পানিগুলো থেকে কিনতে হয়। আমরা আবার খুচরা মূল্যে স্যালাইন বা ওষুধ কিনি না। আর কোম্পানিগুলোও রাতারাতি এত চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। পারলেও প্রচলিত দামে তো কিনতে পারি না।

তিনি বলেন, আমরা উৎপাদক কোম্পানিগুলোকে বুঝিয়ে এবং যুক্তি দিয়ে স্যালাইনের ব্যবস্থা করে থাকি। চাহিদা দু-তিনগুণ পর্যন্ত বাড়লে তা মেটানো যায়। কিন্তু এখন যে হারে ডেঙ্গুরোগী বাড়ছে তাতে স্যালাইনের সংকট প্রকট হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চাহিদা এখন প্রায় ১০ গুণ। এটি সামাল দেওয়া একটু কঠিনই।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন