নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, দুদক আইন এবং বিধি অনুসারে কাজ করে। এখানে ব্যক্তি পরিচয় দেখার সুযোগ নেই।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকালে দুদকের তলবে হাজির হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ইউনূস বের হয়ে যাওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন দুদক সচিব।
এসময় তিনি আরও বলেন, বক্তব্য রেকর্ড করার বিষয়টি হলো, যখন কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তার অবস্থানটি তিনি যেন পরিষ্কার করতে পারেন। সেজন্যই তাকে বক্তব্য দিতে ডাকা হয়।
দুদকের আইনজীবী ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলাটি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন। এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদক সচিব বলেন, মামলাটি দুদক দায়ের করেনি। অভিযোগটি দুদক করেনি। গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারীদের পাওনার যে বিষয়টি ছিল, তারা সেটি পাননি মর্মে অভিযোগ করেছেন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কাছে আপত্তি করে অভিযোগ করেন। কলকারখান পরিদর্শন অধিদপ্তর সত্যতা পাওয়ার পর এটি দুদকে প্রেরণ করে। দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় তদন্ত চলছে। এখানে হয়রানির কোনো সুযোগ নেই। আইনগতভাবে এখানে হয়রানির সুযোগ নেই।
ড. ইউনূসকে গ্রেফতার করা হবে কি না, এ বিষয়ে সচিব বলেন, দুদকে মামলা হওয়ার পরে গ্রেফতার কখন-কীভাবে হবে সেটি আইনে বলা আছে। এরমধ্যে যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তিনি যদি স্বাক্ষ্য-প্রমাণ বা আলামত নষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে থাকেন, যদি তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেন, তিনি যদি কাউকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, তখন তদন্ত কর্মকর্তা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাহলে গ্রেফতারের বিষয়টি আসে।
তিনি পালাবেন না বা আলামত নষ্ট করবেন না, এটি দুদকের কেন মনে হলো? এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সব তথ্য আছে। আমি যে তিনটি শঙ্কার কথা বললাম তার ক্ষেত্রে তেমন কিছুর উদ্ভব হয়নি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বা তার সহযোগীদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেবেন কি না, এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, মামলা সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা যদি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তখন যদি তিনি মনে করেন আদালতের মাধ্যমে বিদেশযাত্রার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন। প্রয়োজন হলে তদন্ত কর্মকর্তা আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে কলকারখানা অধিদপ্তর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগটা এখানে এসেছে। দুদকের পরবর্তী অনুসন্ধান শেষে মামলাটি হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা জামিনে আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যতদূর জানি, একজন বিজ্ঞ আদালতে গিয়ে জামিন পেয়েছেন। অন্যরা জামিনে আছেন কি না এ মুহূর্তে হালনাগাদ তথ্যটি আমার কাছে নাই।
অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, দুদকের তফসিলভুক্ত অভিযোগ হওয়ার পরও আপানারা কেন কাজ করছেন না এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হযেছে। আমরা কিন্তু কোথাও বাধা দেইনি। কোথায়, কীভাবে অর্থ পাচার হয়েছে সব তদন্তে চলে আসবে।
দুদক কি কারো ইশারায় কাজ করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর প্রাথমিকভাবে এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এটি আমাদের তফসিলভুক্ত। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ বিষয়ে বাড়তি কমেন্ট করার সুযোগ নেই।
এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ মামলার অন্য আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। গতকাল (বুধবার) তিন পরিচালকের বক্তব্য নেন তদন্ত কর্মকর্তা।
গত ৩০ মে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলাটি করে দুদক। মামলায় ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন