বিশ্বকাপের দলে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তায়। বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাবেন কী পাবেন না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ছিল। এশিয়া কাপের দলে সুযোগ পাননি। বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাবেন কি না তা নিয়ে যখন যথেষ্ট আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছিল, তখন নিউজিল্যান্ড সিরিজে তিনি সুযোগ পেলেন এবং নিজেদে প্রমাণ করেই বিশ্বকাপের দলে জায়গা পেয়ে গেলেন তিনি।
এরপরের ইতিহাস সবার জানা। এবারের বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটার তিনি। পেয়েছেন একটি সেঞ্চুরি। চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে ব্যাট করে ৯৯ গড় ও ১০১.২ স্ট্রাইক রেটে তার রান ১৯৮। মাহমুদউল্লাহ ক্যারিয়ারে ৪টি সেঞ্চুরি করেছেন, যার সব কটিই আবার আইসিসির প্রতিযোগিতায়।
সেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবার জানিয়ে দিলেন, শেষ বিশ্বকাপ খেলছেন। যে কোনো সময় অবসরের ঘোশষণাও দিয়ে দেবেন তিনি। আইসিসি থেকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায় নিজের অবসর নিয়ে কথা বলছেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৪৯ রানের বড় ব্যবধানে হারলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সেঞ্চুরি সেঞ্চুরির দারুণ প্রশংসিত হচ্ছে সবার কাছে। এরপর, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আজকের ম্যাচের আগে রিয়াদকে নিয়ে ভিডিওটি প্রকাশ করে আইসিসি।
ওই ভিডিওতে মাহমুদউল্লাহ তার পারফরম্যান্স এবং ভবিষ্যাৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, যেকোনো মুহূর্তে অবসর ঘোষণা দেওয়ার কথাও। এই ভিডিওতে তাকে নিয়ে কথা বলেছেন সতীর্থ মুশফিকুর রহিম ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদও।
ভিডিওতে নিজের সেঞ্চুরি নিয়ে মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘২০০৭ সালে বাংলাদেশের হয়ে আমার অভিষেক হয়েছে। এরপর থেকে অনেক বছর ধরে আমি খেলছি। আমি সৌভাগ্যবান যে আইসিসি ইভেন্টে শতকগুলো করতে পেরেছি।’
খালেদ মাহমুদ সুজন মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘সে সব সময় নীরব ঘাতক। তার ৪ ওয়ানডে সেঞ্চুরির সব কটিই আইসিসি ইভেন্টে। ৩টি বিশ্বকাপে এবং ১টি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। এটাই তার সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেয়। সে এখনো অনেক পরিশ্রম করছে এবং এখনো সে অনেক ফিট।’
বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘ক্রিকেট এমন একটি খেলা, যেখানে আপনি বিস্মিত হওয়ার মতো অনেক কিছু দেখবেন। আমি অনেক পরিশ্রম করেছি, যেন বিশ্বকাপে আমি দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাই। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে সে সুযোগ দিয়েছেন। আমি যতটা সম্ভব দলের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে এসেছি।’
নিজের খেলার সঙ্গে তরুণদের পথ দেখানোও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সাবেক এই অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘আমি দলের সিনিয়র একজন খেলোয়াড়। আমি অনেক দিন ধরেই খেলছি। তাই দায়িত্বও চলে আসে। তরুণদের দিকনির্দেশনা দেওয়া, তাদের সঙ্গে কথাও বলা। আমরা চেষ্টা করি বন্ধু-ভাই হিসেবে থাকতে। আমরা চেষ্টা করি তাদের সাহায্য করতে। এটা বের করার চেষ্টা করি যে তাদের জন্য কোনটা ভালো এবং দলের জন্য কী ভালো, সেটাও বের করার চেষ্টা করি।’
এরপরই দেখা যায় মুশফিক কথা বলছেন। মাহমুদউল্লাহ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উনি একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। আর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ইনিংসটা ধরে রাখার জন্য কিংবা দ্রুত রান তোলার জন্য আমাদের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। আমার মনে হয় এ জন্য সে সঠিক লোক, যে কি না আমাদের জন্য কাজটা করবে। উনি নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলছে। আমি জানি, সে ভালো কিছু বা বিশেষ কিছু করার চেষ্টা করবে। সে শুরুটাও দারুণ করেছে। শেষ দুই ম্যাচেও সে খুব ভালো করেছে।’
এরপর সাকিব-মুশফিক-তামিমের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘সাকিব-মুশফিকের ২০০৫ সালে অভিষেক হয়েছে। তামিমের অভিষেক হয়েছে ২০০৬-০৭ সালে। আমরা একসঙ্গেই ছিলাম। আমরা একসঙ্গে অনেক আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করেছি। আমরা জানি এই অনুভূতি কেমন।’
সর্বশেষ নিজের অবসর নিয়ে কথা বলেন মাহমুদউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা হচ্ছে, আমি আমার শেষ বিশ্বকাপ খেলছি। আমি কত দিন খেলব, সেটা আমার শরীর এবং পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করছে। তবে যেকোনো মুহূর্তে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাবে। যেসব প্রতিভা আমাদের ড্রেসিংরুমে আছে; যেমন মোস্তাফিজ, তাসকিন, (নাজমুল হোসেন) শান্ত, লিটন এবং মিরাজরাই এরপর সিনিয়র হবে। সম্ভবত তারাই দলকে এগিয়ে নেবে। একদিন তারাই বাংলাদেশের কিংবদন্তি হবে।’
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন