নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার খেয়াঘাটে আত্রাই নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর। এর পর সংযোগ সড়ক না করেই কাজ গুটিয়ে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজটি কোনো কাজেই আসছে না স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এ অবস্থায় বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজটিতে ওঠানামা করছেন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজটি সুফল পাচ্ছেন না আত্রাই নদীর দুই তীরের কয়েক লাখ বাসিন্দা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উপকরণের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অজুহাতে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ দফায় দফায় বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিলন ট্রেডার্স। করোনা মহামারির সময় নির্মাণ কাজ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ব্রিজের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা হলেও সংযোগ সড়ক না করেই কাজ গুটিয়ে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
উপজেলা এলজিইডি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পূর্বমান্দার বাসিন্দাদের পারাপারের সুবিধার্থে আত্রাই নদীর জোতবাজার খেয়াঘাটে ২১৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৩২ মিটার প্রস্থের একটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল। এতে ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ৮১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
ব্রিজ সংলগ্ন বাইবুল্যা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য আয়েদ আলী বলেন, আত্রাই নদীর বামতীরের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে ব্রিজ পর্যন্ত একটি সংযোগ সড়ক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্রিজটির নির্মাণ শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংযোগ সড়কের কাজ করেননি। তাই ব্রিজটি কোনো কাজে আসছে না।
আয়েদ আলী অভিযোগ করে বলেন, ব্রিজ নির্মাণের সময় খেয়াঘাটে যাতায়াতের রাস্তা কেটে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এখন নদীর পারাপারের জন্য খেয়াঘাটে যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে ব্রিজটিতে উঠে নদী পারাপার হচ্ছেন।
শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার জানায়, নৌকায় নদীর এপার থেকে ওপার যেতে কমপক্ষে আধা ঘন্টা সময় লাগে। অনেক সময় পারাপারের জটিলতায় স্কুলের সময় শেষ হয়ে যায়। দেরিতে স্কুলে যাওয়ায় শিক্ষকদের বকাঝকা খেতে হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিলন ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী দেওয়ান সেকার আহমেদ শিষান বলেন, ব্রিজের কাজ শুরুর পর থেকেই রড, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যায়। এর পর শুরু হয় করোনার মহামারি। এত প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েও ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে।
ঠিকাদার শিষান আরও বলেন, শুধু মাটি ফেলে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যাবে না। সড়কটি সাধারণভাবে নির্মাণ করা হলে বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানিতে দুই ধার ধসে যাবে। বর্তমানে সবকিছুর বাজারমূল্য অনেক বেশি। তাই আগের রেটে আর কাজ করা সম্ভব নয়। নতুন রেট দিলে ব্লক দিয়ে সযোগ সড়কের কাজ করা যাবে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ডিজাইনে একটু সমস্যা আছে। আর নরমাল মাটি দিয়ে কাজ করলে সংযোগ সড়ক টিকবে না। তাই ব্লক দিয়ে এটি নির্মাণ করতে হবে। খুব দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণের চেষ্টা চলছে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন