‘ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত দিয়ে ফলাফল নির্ধারণের প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে। লিখিত পরীক্ষা রাখতেই হবে। নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে হবে। অভিভাবকদের খরচের বোঝা ও অসহনীয় কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে হবে।’
নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল দাবিতে শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এভাবেই নিজের দাবি তুলে ধরেন রাজধানীর গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের মা।
ওই অভিভাবক বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখুন— উন্নত দেশগুলোতেও লিখিত পরীক্ষা পদ্ধতি আছে। হাতে-কলমে শেখানোর নামে যে কাগজ কাটাকাটি, সেগুলো উন্নত দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে শেখানো হয়। আমাদের দেশে সেগুলো মাধ্যমিক স্তরেও শেখানো হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ষষ্ঠ-সপ্তমের মতো স্তর থেকে উন্নত দেশগুলোতে তাত্ত্বিক পড়ালেখায় জোর দেওয়া হয়। আমাদের কথিত নতুন শিক্ষাক্রমে উল্টো। আবার বিজ্ঞান পড়ালেখা একেবারে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা বাড়াতেই হবে। কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষা একসঙ্গে করে কথিত একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। বিভাগ বিভাজন রাখতে হবে। যার যেটা পছন্দ, সে সেটা পড়বে।’
শুক্রবার সকালে এ কর্মসূচি করা হয়। যদিও আয়োজক ‘সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন’ বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে হঠাৎ মানববন্ধন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এরপরও কিছু অভিভাবক ব্যানার এনে মানববন্ধন করেন এবং নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে আগের শিক্ষাব্যবস্থায় ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানান।
অভিভাবকরা বলেন, যেসব শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর ফলাফলের দিকে তাকালে স্পষ্ট দেখা যাবে শিক্ষার্থীরা কীভাবে পিছিয়ে পড়ছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজ, পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কারিকুলাম বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার। অভিভাবকরা এ কারিকুলাম বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
অভিভাবকদের আট দফা দাবি
>> শিক্ষানীতিবিরোধী নতুন কারিকুলাম সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে।
>> নম্বরভিত্তিক দুটি সাময়িক লিখিত পরীক্ষা (৬০ নম্বর) চালু রাখতে হবে এবং ধারাবাহিক মূল্যায়ন হিসেবে ৪০ নম্বর রাখতে হবে।
>> নবম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের সুযোগ অথবা বিজ্ঞান বিভাগ রাখতে হবে।
>> ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি নির্দেশক বা ইন্ডিকেটর বাতিল করে নম্বর ও গ্রেডভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি রাখতে হবে।
>> সবসময় সব শিখন, প্রোজেক্ট ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক ক্লাসের ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে এবং স্কুল পিরিয়ডেই সব প্রোজেক্ট সম্পন্ন হতে হবে।
>> শিক্ষার্থীদের দলগত ও প্রোজেক্টের কাজে ডিভাইসমুখী হতে অনুৎসাহিত করতে হবে এবং তাত্ত্বিক বিষয়ে অধ্যয়নমুখী করতে হবে।
>> প্রতিবছর প্রতি ক্লাসে নিবন্ধন ও সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে, প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা চালু রাখতে হবে এবং এসএসসি ও এইচএসসি দুটি পাবলিক পরীক্ষা বহাল রাখতে হবে।
>> সব সময় সব শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই তা মন্ত্রিপরিষদ ও সংসদে উত্থাপন করতে হবে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন