পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে স্থানীয়ভাবে ১৬০ টাকা কেজি দরে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অবলম্বন করে এই চিনি কেনা হবে।
একই সঙ্গে আন্তর্জাতিভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ১০০ টাকা ৮০ পয়সা কেজি দরে ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্তও হয়েছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে বিক্রির লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ চিনি ও মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
টিসিবি এসব চিনি ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মধ্যে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবে।
বুধবার (২০ মার্চ) অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা হয়। ওই সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে সভার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান।
তিনি জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি ১৬০ কোটি টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি চিনির ক্রয় মূল্য পড়বে ১৬০ টাকা। পবিত্র রমাজন মাস উপলক্ষ্যে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রির লক্ষ্যে এ চিনি কেনা হবে।
চিনির কেজি ১৬০ টাকা, একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে কি না? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হবে। যেহেতু বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনে কিছু স্টক রয়ে গেছে। ওই স্টক থেকে আপতত কেনা হবে। বিদেশ থেকে আমদানি করতে একটু সময় লাগছে। এখন যেহেতু আমাদের এক কোটি পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, সুতরাং এটি সাময়িকভাবে সরকার টু সরকার ১৬০ টাকা কেজি দরে চিনি কেনা হচ্ছে। এই চিনি সরকারি মিলে উৎপাদিত।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন এখন খোলাবাজারে যে চিনি বিক্রি করছে তার কেজি ১৪০ টাকা, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, তারা এটা নেগোসিয়েশন করেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে। যেহেতু সরকারি টু সরকার পারচেস হচ্ছে, সুতরাং সেভাবে তারা সম্মত হয়েছে এবং কিনছে।
তিনি জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি কেজি ১০০ টাকা ৮০ পয়সা হিসেবে এ ডাল কিনতে মোট খরচ হবে ৭৬ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এর আগে ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৫০৬ কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার তেল, ডাল, চিনি ও গম কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৫৩ কোটি ৯৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার গম, ৭৭ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার সয়াবিন তেল, ১০৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার চিনি এবং ১৬৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকার মসুর ডাল ছিল।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা মজুত সুসংহত করতে গম কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি মেট্রিক টন গমের মূল্য ধরা হয় ২৭৯.৯৫ মার্কিন ডলার। ফলে এই গম আমদানিতে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৫৩ কোটি ৯৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি গমের মূল্য ৩০ টাকা ৭৯ পয়সা।
এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৬ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ৬২ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ধরা হয় ১০৪ টাকা ৯০ পয়সা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম ধরা হয় ১০৪ টাকা ৪৪ পয়সা।
ওই সভায় স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আরও ৮ হাজার মেট্রিক টন চিনি ১০৭ কোটি ৬০ লাখ টাকায় কেনার অনুমোন দেওয়া হয়। এই চিনির ক্রয় মূল্য ধরা হয় ১৩৪ টাকা ৫০ পয়সা। এছাড়া ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ৭৭ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন