
রাজশাহীতে মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। দিন দিন বেড়েই চলেছে মশার উপদ্রব। দিন-রাত বলে কোনো সময় নেই। মশার মাত্রাতিরিক্ত আক্রমণে অতিষ্ঠ নগরীর মানুষ। মশার এই মাত্রাতিরিক্ত উপদ্রব থেকে কবে বা কতটুকু রেহাই মিলবে নাকি আদৌ রেহাই মিলবে না সেই দুঃশ্চিতায় দিন-রাত কাটছে নগরবাসীর।
রাজশাহী নগরজুড়ে ফেব্রুয়ারি থেকে মশার উৎপাত বেড়ে গেছে। এ সময় মশার প্রজননের সময়। তাই সর্বত্রই মশার বিচরণ।
সন্ধ্যার পর এই উৎপাত আরও বেড়ে যায়। মশার জন্য বাইরে বসা যায় না। ঘরেও থাকা যায় না। এ পরিস্থিতিতে মশার কয়েল, অ্যারোসলসহ বিভিন্ন উপায়ে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ।
বিশেষ করে ইফতারি ও সেহরির সময় মানুষ মশার জ্বালায় নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়ছেন। মশার কয়েল, স্প্রে ও ইলেকট্রিক ব্যাট ছাড়াও মশারি টাঙিয়েও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তাঁরা।
রাজশাহী মহানগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আসাম কলোনী এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক আব্বাস আলী জানান, রাজশাহী মহানগরীতে মশার উপদ্রব এতটাই বেড়েছে যে বলার মত নয়। তিনি বলেন, অথচ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথাই নাই।
একই ওয়ার্ডের শালবাগান এলাকার বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী মোতালেব ক্ষোভের সুরে বলেন, মশার অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মশা কমার কোনো লক্ষ্মণ নেই। মশা কমবেই বা কি করে? মশা মারার কোন কার্যকরী ব্যবস্থাই তো নেই। বছরে একবার মশার ধোঁয়া দেয় কি দেয় না। এটা দেয়া হয় লোক দেখানোর জন্য মশা মারার জন্য নয়।
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মশা নিধনের অভিযান ঝিমিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নগরীর ভুক্তভোগী মানুষ। আর এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী।
মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরাও। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর নিচতলাতে মশার উপদ্রবে রোগী ও স্বজনরা একবিন্দুও ঘুমাতে পারেন না।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, মশা নিধনে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে। নগরী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে। যেসব স্থানে মশার লার্ভা তৈরি হয়, সেসব স্থানের ড্রেন, নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেলিম শেখ নগরের কাজলা এলাকায় থাকেন। তাঁর এলাকায় এতই মশার উৎপাত যে পড়াশোনাসহ দৈনন্দিন কোনো কাজই ঠিকভাবে করা যায় না। রাত–দিন—সব সময় মশারি টাঙিয়ে রাখতে হয়।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, তাদের মশকনিধন অভিযান শুরু হয়েছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। মশকনিধন অভিযান চলেছে ১২ মার্চ পর্যন্ত। বছরে দু'বার—ফেব্রুয়ারি-মার্চ ও অক্টোবর-নভেম্বর ফগার মেশিন দিয়ে মশকনিধন অভিযান চালানো হয়। এটা মশার প্রজননের সময়। এ ছাড়া বছরব্যাপী নর্দমার পানিতে মশার লার্ভা ধ্বংসে লার্ভিসাইড দেওয়া হয়।
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচটি ওয়ার্ডে সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে ও বিকেল চারটা থেকে দুই বেলা ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হয়। এ ছাড়া এক দিন কেন্দ্রীয়ভাবে নগরের বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ফগার মেশিন দিয়ে কীটনাশক ছিটানো হয়।
নগরের লক্ষীপুর এলাকায় থাকেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন। তিনি বলেন, মশার অত্যাচারে পড়াশোনা করতে সমস্যা হচ্ছে। মশার কামড়ের কারণে হাতে–পায়ে লাল লাল গুটি হয়ে গেছে। একটি কয়েলে এক রাত যায়। ভালো একটি কয়েলের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা। এর ধোঁয়াও তো ক্ষতিকর। ড্রেন, নর্দমা পরিষ্কার না করা হলে মশার উৎপাত কমবে না।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন বলেন, 'মশা তো শুধু রাজশাহীতে নয় সারা বাংলাদেশেই। মশক নিধনে তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্ক ফোর্স ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন সারা বছরই মশকনিধনে কাজ করে থাকে। এ ছাড়া লার্ভিসাইড (লার্ভা মারার ওষুধ) ছিটানো হয়। ফগার মেশিন স্প্রে করে পূর্ণবয়স্ক মশা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই কীটনাশকের ধোঁয়া জিনিসটা ভালো না। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটার অনুমোদন দিয়েছে। তবে লার্ভিসাইডে জোর দেওয়া উচিত। বছরব্যাপী তাঁরা তা–ই করছেন। তবে মশার প্রজনন বন্ধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই জানে মশা কোথায় জন্মে, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সে বিষয়ে সচেতন হলে মশার উৎপাত কমে আসবে।’
একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, মশার উৎপাতে তারা টেবিল চেয়ারে বসে লেখাপড়া করতে পারে না। বাধ্য হয়ে মশারি টাঙিয়ে লেখাপড়া করতে হয়।
নগরীর নওদাপাড়া এলাকার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুবায়ের বলে, সারাদিনই মশার উপস্থিতি থাকে। তবে বিকেল হতেই মশার উপদ্রব শুরু হয়। মশারি টাঙিয়েও রেহাই পাওয়া যায় না। পড়ালেখা করতে হচ্ছে মশারির ভেতরে বসে। তার দাবি, অনেকেই কয়েলের ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না। তাই কয়েলও ব্যবহার করা যায় না।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন