রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি বেসকারি স্থাপনা, বেসরকারি টেলিভিশন অফিসে সোমবার (৫ আগস্ট) বিকালে ব্যাপক হামলা লুটপাট ও আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হামলা হয়েছে প্রধান বিচারপতির বাসভবন, জাজেজ কমপ্লেক্স, পুলিশ সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাস ভবন, ঢাকা জেলা পুলিশের বাসভবন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অফিসসহ অসংখ্য স্থাপনায় আগুন, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের গাড়ি, পুলিশের যানবাহন, গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়িতে। বহু মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে অনেক গাড়ি। পোড়ানো হয়েছে বিপুল সংখ্যক মোটর সাইকেল।
পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন
বিক্ষোভকারীদের একটি দল সোমবার সন্ধ্যার একটু আগে ফনিক্স রোডে পুলিশ সদর দপ্তরে হামলা ও ভাঙচুর করে। এসময় তারা ফটকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আতঙ্কিত পুলিশ সদস্যরা প্রাণ বাঁচাতে দেওয়াল টপকে বা যে যেভাবে পেরেছে সেভাবে বেরিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে। আগুনে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস সেখানে গিয়ে আগুন নিভিয়েছে।
সদর দপ্তরের ভেতরে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা জীবন বাঁচাতে দেয়াল টপকে বা অন্যকোনভাবে পালিয়ে যান। তারা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেছেন। পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশ দপ্তরে আইজিপি আব্দুল্লাহ আল-মামুন উপস্থিত ছিলেন না।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন এসআই ক্ষোব প্রকাশ করে বলেন, ‘আইজিপির নির্দেশে আমরা কাজ করেছি। আর বিপদ দেখে তিনি আমাদেরকে ফেলে চলে গেছেন। আল্লায় তার বিচার করবো।’
ধানমন্ডি ৩২ ভস্মীভূত
সোমবার বিকাল ৩টার দিকে একদল জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ঘিরে ফেলে। উপস্থিত নিরাপত্তাকর্মীরা প্রাণ বাঁচাতে সরে গেলে জনতা ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিকাল ৪টার দিকে স্মৃতি জাদু ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। সন্ধ্যার আগেই পুরো জাদুঘর ভস্মিভুত হয়েছে। সেখানে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নানা স্মৃতি ও বঙ্গবন্ধুর সংরক্ষিত সকল স্মৃতি ভস্মিভূত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের তিন কার্যালয়ে হামলা
রাজধানীতে ধানমন্ডির ৩/এ–তে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। জানা গেছে, কার্যালয়ে হামলার পর সেখানে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। এছাড়া গুলিস্থানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বিকাল ৪টার দিকে কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।
সুধা সদনেও আগুন
রাজধানীর ধানমন্ডির সুধা সদনেও আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দেখা যায়, সুধা সদনে ভাঙচুর করা হয়েছে। বাড়ির ভেতরে আগুনও দেওয়া হয়েছে। বাড়ি থেকে জিনিসপত্র বের করে যে যার মতো নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এছাড়া রাজধানী ঢাকার বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একদল জনতকাকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হাতুড়ি দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় হামলা
রাজধানীর ধানমন্ডির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসা ভাঙচুর করছেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ফটক ভেঙে হাজারো আন্দোলনকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় ঢুকে পড়েছেন। বাড়ির ভেতরে আগুন দেওয়া হয়। ভেতরে ভাঙচুরও লুটপাট করা হয়।
প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুর
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের বাসভবনে ভাঙচুর করেছে বিক্ষোভকারীরা। সোমবার বিকাল ৫টার বাসভবন ভাঙচুর চালানো হয় বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেশ কিছু মানুষ দেয়াল টপকে ১৯ হেয়ার রোডে অবস্থিত প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ঢুকছিলেন। ভেতর থেকে চিৎকার, হইহুল্লোড় ও ভাঙচুরের শব্দ শোনা যায়। ওই সময় ভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে যান। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের পাশাপাশি বাসভবনে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করা হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। হামলার কিছুক্ষণ আগে প্রধান বিচারপতি বাসভবন থেকে বের যান।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন
সোমাবর বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। সেখানে দলীয় সভাপতির অফিসও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া আরও কয়েকটি কার্যালয়ে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়।
এটিএন বাংলার অফিস ভাঙচুর
কারওয়ান বাজারে এটিএন বাংলার সামনে রাখা একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে ও আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এটিএন বাংলা কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে স্টেশনে হামলা চালায় তারা। সম্প্রচার বন্ধ না হলেও এটিএন বাংলার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
কারওয়ান বাজারে আরেক গণমাধ্যম এটিএন নিউজের সামনে রাখা গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। সেখান থেকে কম্পিউটারসহ বেশ কিছু যন্ত্রাংশ লুটপাট করা হয়েছে।
একাত্তর টিভিতে হামলা
বিকালে একাত্তর টেলিভিশনের বারিধারার কার্যালয়ের সামনে রাখা একাধিক গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে চেয়ার–টেবিল, টেলিভিশন ও কম্পিউটার ভাঙচুর এবং লুট করা হয়েছে বলে টেলিভিশনটির একাধিক সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন। হামলার পর একাত্তর টিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।
সময় টিভিতে হামলা
এদিকে বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়কে সময় টেলিভিশনের কার্যালয়ের নিচে রাখা গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। সময় টেলিভিশনের কার্যালয়ে থাকা সংবাদকর্মীরা যে যে অবস্থায় ছিলেন, সে অবস্থাতেই বের হয়ে যান বলে প্রতিষ্ঠানটির একাধিককর্মী জানিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতে হামলা
তেজগাঁওয়ে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের কার্যালয়ের নিচে রাখা গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের আটকে দেন। তারা ব্যাপকহারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার পর চলে যায়।
ডিবিসিতে হামলা
মহাখালীতে ডিবিসি টেলিভিশনের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। টেলিভিশনটির বেশ কিছু গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর ও লুটপাটের কারণে টেলিভিশনটির সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। তারা বিকল্প উপায়ে রেকর্ড করা অনুষ্ঠান চালান।