দেশের ৬৫২ থানার মধ্যে ৪৫০টিরও বেশী থানায় হামলা, ভাঙচুর, আগুন | Daily Chandni Bazar দেশের ৬৫২ থানার মধ্যে ৪৫০টিরও বেশী থানায় হামলা, ভাঙচুর, আগুন | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৭ আগস্ট, ২০২৪ ০৯:৫১
Bangladesh Unrest
দেশের ৬৫২ থানার মধ্যে ৪৫০টিরও বেশী থানায় হামলা, ভাঙচুর, আগুন
বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের বিবৃতি
অনলাইন ডেস্ক

দেশের ৬৫২ থানার মধ্যে ৪৫০টিরও বেশী থানায় হামলা, ভাঙচুর, আগুন

মঙ্গলবার মোহাম্মদপুর থানার চিত্র। ছবি: বিবিসি

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরুর পর গেলো দুইদিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় বিক্ষোভকারীদের হাতে থানা জ্বালিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে, ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সোমবার দেশের ৪৫০টিরও বেশি থানা 'আক্রান্ত' হয়েছে।

সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছাড়ার পর বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজিত মানুষজন থানা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেন।

কোন কোন থানায় হামলা ঠেকাতে গুলি এবং টিয়ারগ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ।

এসময় বেশ কিছু থানা থেকে সরে যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

ঢাকায় 'অধিকাংশ' থানায় পুলিশ নেই

ঢাকার যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, আদাবরসহ বিভিন্ন থানায় রাতভর হামলা এবং লটুপাটের ঘটনা ঘটে।

সোমবার দিনব্যাপী থানায় থানায় এসব হামলা হলেও রাতে বিভিন্ন থানা থেকে সরে যান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে মোহাম্মদপুর থানার সামনে গিয়ে বিবিসির সংবাদদাতারা দেখতে পান, পুরো থানা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

থানা ভবনের কয়েকটি রুম থেকে তখনো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। থানা প্রাঙ্গণে এখানে ওখানে পুড়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি গাড়ি, আর আসবাবপত্র ছড়িয়ে আছে।

থানার ভেতর থেকে ফ্যান, চেয়ার-টেবিল, ফ্রিজ, তোষক-বালিশসহ নানা ধরণের জিনিসপুত্র লুট হয়ে গেছে রাতেই।

ওই থানায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সোমবারই নিরাপত্তা সংকটে থানা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।

মোহাম্মদপুর থানার একজন এসআই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে জানান, থানার ভেতরে থাকা ‘সব অস্ত্র এবং গোলাবারুদ লুট হয়ে গেছে’।

তবে, হাজতখানায় যেসব আসামি ছিলো সোমবার সকালের মধ্যেই তাদের আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল, ফলে কোন আসামির ক্ষতি হয় নি।

মোহাম্মদপুর থানার দুই কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত আদাবর থানা। সোমবার সেখানেও হামলা এবং ব্যাপক লুটপাট হয়েছে।

ভবনের সামনে রাখা পুরনো গাড়ি, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল লুঠ হয়ে হয়েছে। বিকল কয়েকটি পড়ে থাকা গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

থানার ভেতরের জিনিসপত্র সোমবার রাতেই লুট হয়ে যায়।

এই থানাতেও মঙ্গলবার কোন পুলিশ সদস্য দেখা যায়নি।

সোমবার বাড্ডা এবং ভাটারা থানাতেও হামলা হয়। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় থানা ভবন।

থানার বাইরে রাখা সরকারি গাড়ি এবং থানার ভেতরে সবকিছুই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে । এই দুটি থানা থেকেও সরে গেছেন পুলিশ সদস্যরা।

এছাড়া খিলগাঁও, কদমতলী, উত্তরা পূর্ব, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, লালবাগসহ বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা সোমবার সরে যান।

এসব থানায় একের পর এক হামলার মুখে নিরাপত্তার কারণে থানা ভবন ত্যাগ করার নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন ডিএমপির একটি থানায় কর্মরত একজন কর্মকর্তা।

 

এছাড়া বংশাল, বাড্ডাসহ কোন কোন থানার পুলিশ সদস্যরা সোমবার রাতে থানা ত্যাগ করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আশ্রয় নেন।

এসময় কোথাও কোথাও হামলার মুখে পুলিশকে গুলি ছুড়তে দেখেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন বংশালের কয়েকজন বাসিন্দা।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে রাজারবাগের পুলিশ লাইনসে সাইরেন বাজছে।

এর আগে সোমবার যাত্রাবাড়ি, বাড্ডাসহ বিভিন্ন থানায় হামলা হলে হামলাকারীদের উদ্দেশ্য গুলি ছোঁড়ে পুলিশ।

সোমবার বিভিন্ন থানায় হামলা হওয়ার পর পুলিশের গুলিতে হাতহতের খবর দিচ্ছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

বিভিন্ন খবরে বলা হচ্ছে, ঢাকার ৫০টি থানার অধিকাংশই পুলিশবিহীন অবস্থায় রয়েছে। যদিও, এ নিয়ে জানতে ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সাভার ক্যান্টনমেন্টে ‘আশ্রয়’ নিয়েছিলেন আশুলিয়া থানার পুলিশ

সাভারের দুইটি এবং ধামরাইয়ের একটি থানায় সোমবার রাতে ব্যাপক হামলা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

সাভারের স্থানীয় সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, আশুলিয়া থানায় মঙ্গলবার সকালে চারটি লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

রাতে আশুলিয়া থানার পুলিশ সদস্যরা থানা ভবন থেকে বেরিয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকে এগুতে থাকেন।

এসময় তাদের উপর হামলা হলে পুলিশ সদস্যদের গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এক পর্যায়ে তারা ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সাভার ক্যান্টনমেন্টেন সামনে সেনাসদস্যরা অবস্থান নিয়ে আছেন। আর তাদের সামনে উত্তেজিত লোকজন পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে নানারকম বক্তব্য দিচ্ছেন।

এছাড়া সাভার এবং ধামরাইয়ের দুটি থানাতেও হামলা চালিয়ে লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পুলিশের বাহন

ছবির ক্যাপশান,পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পুলিশের বাহন

মুন্সীগঞ্জে থানা এবং এসপি অফিসে হামলা, অস্ত্র লুট

মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বল বিবিসিকে জানিয়েছেন, জেলার ছয়টি থানার কোনটিতেই এখন আর কোন পুলিশ সদস্য নেই। প্রতিটি থানাতেই হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাট হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে বলে তিনি জানিয়েছেন। এসময় থানার আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায় জনতা। পাশেই পুলিশ ফাঁড়িতেও হামলা এবং ভাঙচুরও হয়।

এছাড়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলা করে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

এর আগেই অবশ্য পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরে যান।

দেশব্যাপী আরো যেসব থানায় হামলা

গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় সোমবার রাতে হামলা এবং ভাঙচুর হয়। এছাড়া সদর থানায় অগ্নিসংযোগ করে হামলাকারীরা।

জেলার অন্তত: সাতটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার পর সেখান থেকে পুলিশ সদস্যরা চলে গেছেন বলে জানাচ্ছেন গাজীপুরের সাংবাদিক রাজীবুল হাসান।

গাজীপুরের জয়দেবপুর থানাতেও হামলা, ভাঙচুর হয়। এসব থানার কোনটিতেই পুলিশ সদস্য নেই। এমনকি জেলার সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাতেও কাজ করতে দেখা যায়নি কোন ট্রাফিক পুলিশকে।

ভাঙচুর করা হয় ১১টি পুলিশ বক্সে।

নরসিংদী শহরে সোমবার বিকালে বিজয় মিছিল থেকে হামলা করা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। ভাঙচুরও করা হয়।

পোড়ানো বাহন

পরে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি শান্ত করে পুলিশ।

এছাড়া নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে।

এসব ঘটনায় হতাহতের খবরও দিচ্ছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা না থাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

এছাড়া দেশজুড়েই বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাটের ঘটনা ঘটছে।

তবে সার্বিকভাবে পুরো দেশে থানাগুলোর চিত্র কেমন সে বিষয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এখনও কোন তথ্য দেয়া হয়নি।

পুলিশ সদর দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোন সাড়া মেলেনি।

তবে মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, দেশের ৪৫০টিরও বেশি থানা আক্রান্ত হয়েছে।

স্বাক্ষরবিহীন ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের কোন সদস্য কোন অন্যায় কাজ করে থাকলে অবশ্যই তার বিচার হবে। ... আমরা থানা-ফাড়ি ও পুলিশি স্থাপনার নিরাপত্তা চাই।”

এছাড়া বিবৃতিতে প্রতিটি পুলিশ সদস্যের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ‘কর্মবিরতি’ ঘোষণা করা হয়। সূত্র: বিবিসি