বাংলাদেশের কাছে ৮০০ মিলিয়ন (৮০ কোটি) ডলার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল রয়েছে ভারতের ধনকুবের গৌতম আদানির বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার লিমিটেডের। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মুনসুর ব্লুমবার্গ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহের ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় শতাধিক মানুষ নিহত এবং পূর্ববর্তী সরকার ক্ষমতা হারানোর পর এই বকেয়া বিলের বিষয়টি সামনে এসেছে।
গভর্নর আহসান এইচ মুনসুর ব্লুমবার্গ নিউজকে জানান, বাংলাদেশের কাছে আদানি পাওয়ারের ঝাড়খণ্ডের গড্ডা জেলার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা বিদ্যুতের এই বিশাল অংকের বিল বকেয়া রয়েছে।
তিনি বলেন, যদি আমরা এই বিল পরিশোধ না করি, তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।
যদিও আদানি পাওয়ার বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে না, তবে বিল পরিশোধ না হলে ঋণদাতা ও কয়লা সরবরাহকারীদের চাপের মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অবগত ব্যক্তিরা। আদানি পাওয়ার এই বকেয়া সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য আদানি গ্রুপের একজন প্রতিনিধি সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিল পরিশোধে এই বিলম্ব আদানি গ্রুপের জন্য আর্থিক ও ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে যখন তারা ভারতসহ প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও নেপালে নিজেদের অবস্থান প্রসারিত করছে। এ প্রসঙ্গে গৌতম আদানি ২০২২ সালে এক পোস্টে গড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশনকে প্রশংসা করেছিন। গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গত বছরের এপ্রিল মাসে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
আদানির পাশাপাশি ভারতের অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, যেমন-এনটিপিসি লিমিটেড ও পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেডও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। তবে তাদের কাছেও কোনও বকেয়া রয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
এই মাসের শুরুতে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি মিলে এক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন। ছাত্র আন্দোলনকে শান্ত করতে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করার পরিস্থিতিতে এই সরকার গঠন হয়। কিন্তু এখনও একটি অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। যার মধ্যে বিভিন্ন সেক্টরের ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর মুনসুর। এর মধ্যে এয়ারলাইন্সের বকেয়া বিলও রয়েছে, যা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ক্রমশ কমছে। ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট রিজার্ভ ছিল ২০.৫ বিলিয়ন ডলার, যা প্রায় তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য যথেষ্ট। এই অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি আরও ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
গভর্নর মুনসুর বলেন, বার্তাটি হলো, আমাদের অর্থের প্রয়োজন। আমরা সব বকেয়া পরিশোধ করতে চাই।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস