বগুড়ার শেরপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি ক্লিনিকে চাঁদাবাজির অভিযোগে তিন জনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় ছাত্র—জনতা। সোমবার (২ সেপ্টেমাবর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা শুবলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাতে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার মারিয়া গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে দৈনিক জয়সাগর পত্রিকার পরিচয়ে আব্দুল হালীম (৪০), বগুড়া সদর উপজেলার শিববাটি গ্রামের রোস্তম সেখের ছেলে স্বাধীন বাংলা পত্রিকার পরিচয়ে মোক্তার শেখ (৩৯) ও শেরপুর পৌর শহরের উত্তরসাহাপাড়া মহল্লার সিরাজ উদ্দিন খানের ছেলে জাতীয় অর্থনীতি পত্রিকার পরিচয়ে রায়হান পারভেজ কমল (৩৯)। এছাড়াও এজাহারে শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ঘোলাগাড়ী ঘুটুবটতলা গ্রামের মাসুদ রানা (৩০) সহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের শুবলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারজানা ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন।
শেরপুর থানার পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এই চক্র অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে আসছে। গত রোববার দুপুরে অভিযুক্তরা উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হুসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে ১ হাজার টাকা নেন।
একই দিন বেলা ২টার দিকে শুবলী কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে দেড় হাজার টাকা নিয়েছেন। একই ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে পান ৫ হাজার টাকা। বাকি টাকা পরের দিন নেওয়ার কথা বলে তাঁরা চলে আসেন। পরদিন সোমবার দুপুরে একই গ্রুপ শুবলী উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষক ফারজানা ইসলামের কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।
এ ঘটনা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা জানাজানি করলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। এ সময় আবদুল হালিম, মুক্তার শেখ ও রায়হান পারভেজকে ক্ষুব্ধ হয়ে গণধোলাই দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে সংঘবদ্ধ গ্রুপের মো. মাসুদসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিনজন ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তিনজনকে ঘেরাও করে রাখে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় তাঁদেরকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
শুবলী কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা প্রদানকারী মাসুদ রানা বলেন, রোববার দুপুরে আমি অফিসরুমে তালা দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। এই সুযোগে ওই ব্যক্তিরা ভিডিও ধারণ করেন। আমি ফিরে এলে তাঁরা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমার কাছে থাকা দেড় হাজার টাকা দিয়েছি। তাঁরা একইভাবে আমার অফিসের স্বাস্থ্য সহকারী জাহানারা বেগমের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। সোমবার তাঁরা বাকি টাকা নিতে এলে উত্তেজিত ছাত্র—জনতা তাঁদের ওপর হামলা করে।
মামলার বাদী শুবলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারজানা ইসলাম বলেন, রোববার আমি ছুটিতে ছিলাম। আমাকে না পেয়ে তারা সোমবার স্কুলে এসে গাছ কাটা, জাল সনদ ইত্যাদি আপত্তিকর প্রশ্ন তুলে আমাকে ও অন্য শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। এ সময় স্কুলের শিক্ষার্থীরা এসে তাদের ঘেরাও করে ফেলে। খবর পেয়ে পাশেই শুবলী কমিউনিটি ক্লিনিক ও সুবলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লোকজনও ছুটে আসেন। নিমেষেই সেখানে সহ¯্রাধিক লোক জড়ো হয়ে তাদের মারধর শুরু করে। আমরা তাদের রক্ষা করে থানায় খবর দিই।
শেরপুর থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত ও গ্রেফপ্তারের চেষ্টা চলছে।