জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কানাইপুকুর গ্রামের মন্ডলপাড়ার পুকুর পাড়ে কয়েক হাজার শামুকখোল পাখির আশ্রয়স্থল এই গ্রামের পরিচিতি এনে দিয়েছে দেশ জুড়ে। তারা এই পাখির উপস্থিতিকে তাদের সৌভাগ্য হিসেবে দেখছেন। ক্ষেতলাল উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দুরত্বের এই গ্রামে পাখি দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে দর্শনার্থীরা। এছাড়া ক্ষেতলাল উপজেলার কাজীপাড়া মহব্বতপুর গ্রামে শামুকখোল পাখি নিরাপদে বাস করে। সেখানেও দর্শনার্থিরা পাখি দেখতে ভিড় জমায়।
ইন্টারনেট সুত্রে জানা যায়, এশীয় শামুকখোল নামের এই পাখিকে ইংরেজিতে এশিয়ান ওপেন বিল। এর বৈজ্ঞানিক নাম আনাস্টোমাস ওসিটানস । বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ করলে দাঁড়ায় মূখ খোলা বা হাই তোলা।
কানাইপুকুর গ্রামের গাছগুলোতে শুধু শামুকখোলই নয় মাছরাঙা, পানকৌড়ি, রাতচোরা ও চড়ুইপাখি বাসা বেঁধে আছে। গ্রামের মানুষের ভালবাসা আর মমত্বে নিরাপদে বাস করছে পাখিগুলো। বহিরাগত শিকারি অথবা গ্রামের দুষ্ট ছেলেরা এই পাখিগুলোর যেন ক্ষতি করতে না পারে সেজন্যও সতর্ক থাকেন গ্রামবাসী। সারাদিন পাখির কিচির—মিচিরে কান পাতা দায় হলেও গ্রামের সব বয়সের মানুষের ভালবাসা পেয়ে প্রজননের মাধ্যমে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে পাখির সংখ্যা।
কানাইপুকুর গ্রামের গৃহবধূ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মহসিনা বেগম বলেন, ‘পাখিদের আবাসস্থলকে নিরাপদ রাখতে তারা পুকুর পাড়ের গাছগুলো কখনও কাটবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে যতদিন ইচ্ছে পাখিরা সেখানে নিরাপদে বাস করতে পারবে। নিরাপত্তা দিতে তাদের পাশাপাশি গ্রামের মানুষরাই পাখিগুলোকে আগলে রেখেছেন।
ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং পুকুরের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘গ্রামবাসীর অকৃত্রিম ভালবাসা পেয়ে পাখিগুলো কয়েক বছর ধরে নিরাপদেই আছে। তবে সরকারিভাবে পাখি কলোনি হিসেবে ঘোষণা করলেও তেমন কোন নজরদারি নেই। তাই সরকারি নজরদারি বৃদ্ধি পেলে পাখিগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে তাদের আর ভাবতে হবে না’।
ক্ষেতলাল উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. পলাশ চন্দ্র রায় বলেন নিরাপত্তার কথা ভেবে পাখির জন্য এই এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। পাখির রোগ বালাই দেখা দিলে তাৎক্ষনিক ভাবে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়। এছাড়া পাখি শিকার না করার জন্য সেখানে স্থানীয় লোকজন নিয়ে সভা করা হয়। কানাই পুকুর গ্রামে শামুকখোল পাখির অভয়াশ্রম বৃহৎ পরিসরে সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার বলেন, ‘এ ধরণের পাখি সাধারণত শীত প্রধান সাইবেরিয়া, সুইডেন, নরওয়ে ইত্যাদি দেশ থেকে আসে। শীত চলে গেলে আবার তারা ফিরে যায়। তবে আমাদের দেশের পাখিগুলো এশিয়ান অঞ্চলের হওয়ায় এদের নাম এশিয়া শামুকখোল।
এই পাখিগুলো স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধে কোথাও প্রজনন করছে এমন ঘটনা বিরল হলেও কানাইপুকুর গ্রামে ঘটেছে ব্যতিক্রম ঘটনা। এটি সম্ভব হয়েছে পাখির প্রতি গ্রামবাসীর অকৃত্রিম ভালবাসা ও মমত্ববোধ আর খাদ্য নিশ্চয়তার কারণে।