আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষে ছয় মামলা, বহিরাগতসহ আসামি ১৯১০ | Daily Chandni Bazar আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষে ছয় মামলা, বহিরাগতসহ আসামি ১৯১০ | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০২:২৩
আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষে ছয় মামলা, বহিরাগতসহ আসামি ১৯১০
অনলাইন ডেস্ক

আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষে ছয় মামলা, বহিরাগতসহ আসামি ১৯১০

শ্রমিক অসন্তোষে আজ আশুলিয়ার ১৭ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছবি: © The Daily Star

ঢাকার সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বহিরাগত ও উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকদের সঙ্গে মিশে বিভিন্ন কারখানায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও মারধরের ঘটনায় আশুলিয়ায় থানায় ছয়টি মামলা দায়ের হয়েছে।

এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৯১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আরেক মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হলেও কোনো সংখ্যার উল্লেখ নেই।

 

৫ থেকে ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষ পৃথক মামলাগুলো করে জানিয়ে আশুলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, “তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আশুলিয়ার বেরন এলাকার ইয়াগী বাংলাদেশ গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার সহকারী ব্যস্থাপক (প্রশাসন) জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ৩১।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে প্রায় ২০০ জন বহিরাগত ইয়াগী বাংলাদেশ গার্মেন্টসে অতর্কিতে হামলা চালায়।

হামলাকারীরা কারখানার প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে লুটপাট করে।

কারখানার নিরাপত্তা প্রধান আবুল কাশেম ঠাকুর, সুপারভাইজার আব্দুস সাত্তার, নিরাপত্তা প্রহরী তুলা মিয়া, মাসুদুর রহমান, সুলতান, ব্যবস্থাপক (প্লানিং) আব্দুল হামিদ, স্টোর ইনচার্জ সোলাইমান, স্যাম্পল ম্যানেজার মো. মশিউরসহ অন্য কর্মকর্তারা বহিরাগতদের বাধা দিলে তাদের মারধর করে জখম করা হয়।

হামলাকারীরা কারখানা থেকে ল্যাপটপ, মনিটার, সিসি ক্যামেরাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায় এবং কারখানার ভেতরে ভাঙচুর চালায়।

পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও বিজিবির টহল দল এগিয়ে এলে বহিরাগত হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

এর আগের দিন বুধবার টংগাড়ি এলাকার ন্যাচারাল ডেনিমস লিমিটেড কারখানার সহকারী ব্যস্থাপক (প্রশাসন) সবুজ হাওলাদার বাদী হয়ে চার জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলার নম্বর ২৮।

মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন- বুলেট (২৩), সুজন সরদার (২১), হারুন অর রশিদ (৪২), মো. গাদ্দাফিসহ (২৪) অজ্ঞাতনামা ৩০ জন। তারা সবাই এই কারখানার শ্রমিক-কর্মচারী।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন দাবি তুলে কাজ বন্ধ রেখে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে থাকে। পরে তাদের দাবি মেনে নেয় কর্তৃপক্ষ। তারপরও কাজ বন্ধ রেখে লাঠিসোঁটা নিয়ে বুধবার সকাল ৯টার দিকে কারখানার ছয় তলা থেকে নিচ তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লোরে কর্মরত নিরীহ শ্রমিকদের কাজে বাধা দেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, কাজ বন্ধ করতে না চাইলে কয়েকজন শ্রমিককে তারা মারধরও করেন। কর্মকর্তাদের একটি কক্ষে আটকে রেখে ফ্যাক্টরিতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

এ ছাড়া আশুলিয়ার ইউসুফ মার্কেট এলাকার ডিসাং সোয়েটার লিমিটেড কারখানার ব্যস্থাপক (প্রশাসন) ইকবাল হোসেন তপন বাদী হয়ে বুধবার আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ২৯।

মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। তবে আসামির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।

এ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৭ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে পাশের জেনারেশন নেক্সট লিমিটেডের কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক বহিরাগত লোকজন নিয়ে ডিসাং সোয়েটার কারখানায় হামলা চালায়। তখন বাইরে থাকা জেনারেশন নেক্সট ও টপটেক্স কারখানার উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা ও লুটপাট চালায়।

তখন কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মারধর করা হয়।

ভাঙচুর করা হয় কারখানার জানালার কাচ, জাকার্ড মেশিনসহ মূল্যবান মালামাল। পরে সেনাবাহিনীর টহল দল এলে হামলাকারীরা চলে যায়।

আশুলিয়ার বঙ্গবন্ধু রোড এলাকার আলিফ এমব্রয়ডারি ভিলেজ লিমিটেড, লাম-মিম অ্যাপারেল্স ও লাম-মিম অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড কারখানার ব্যস্থাপক (এইচআর অ্যাডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স) মো. রেফাই সিদ্দিক বাদী হয়ে ৯ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ২০।

মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ৮ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে ১০টার দিকে বহিরাগতরা তাদের কারখানার মূল ফটকে এসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কাজ বন্ধ করতে বলে। তখন কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বহিরাগতরা কারখানার গেইট ভাঙচুর করে ভেতরে প্রবেশ করে দরজা-জানালার কাচ, সিসি ক্যামেরা, এমব্রয়ডারি মেশিন, প্রিন্টিং মেশিনসহ মূল্যবান মালামাল ভাঙচুর করে। কারখানার নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মকর্তাদের মারধরও করে।

খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।

জিরাব পুকুরপাড় এলাকার লুসাকা গ্রুপের সহকারী ব্যস্থাপক (এইচআর অ্যাডমিন) মো. সোহেল রানা বাদী হয়ে ৯ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ১৮।

মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, তাদের শ্রমিকরা ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার দিকে কার্ড পাঞ্চ করে কারখানায় প্রবেশ করেন। এর মধ্যে কিছু শ্রমিক অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া তুলে উৎপাদন বন্ধ রেখে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে থাকেন। কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের শান্ত হওয়ার কথা বললে তারা মারমুখি হয়ে এগিয়ে আসে ও কারখানায় ভাঙচুর করেন।

এক পর্যায়ে আসামিরা কারখানার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিম্মি করে মারধর শুরু করে। দুপুর ১২টার দিকে জিম্মি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রাণ রক্ষার জন্য সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান। পরদিনও একই ঘটনা ঘটনায় উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকরা।

আশুলিয়ার গৌরিপুর এলাকার ম্যাকসসন্স স্পিনিং মিলস পিএলসি কারখানার সহকারী মহা ব্যস্থাপক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগ) মো. মাকসুদুর রহমান বাদী হয়ে ৫ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ৯। মামলায় অজ্ঞাতনামা এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।