
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে (৯ম—১০ম) শ্রেণী খোলার নিমিত্তে চার পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগের সময় চার শিক্ষকের কাছ থেকে ঘুস বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক, অফিস সহকারী ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি।
বিনা বেতনে ওইসব শিক্ষকদের ৭—৮ বছর চাকরি করে নেওয়ার পর তাদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে নতুন করে অন্য জনকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর ওই চার শিক্ষকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ করা হয়েছে আত্মসাৎ। সম্প্রতি উপজেলার আবাদপুকুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এমন প্রতারণা, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। এসবের প্রতিকার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ চেয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর একযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রতারণার শিকার চারজন সহকারী শিক্ষক।
অভিযোগে জানা গেছে, আবাদপুকুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ২০০১ সালে স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়টির মাধ্যমিক পর্যায়ে (৯ম—১০ম) শ্রেণী খোলার নিমিত্তে ২০০৬ সালে শাহিদা আক্তারকে নিয়োগ দেওয়ার নামে সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) হিসাবে এক লাখ টাকার বিনিময়ে মৌখিকভাবে নিয়োগ দেয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তৎকালীন সভাপতি। এরপর ২০১৩ সালে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী হাতিয়ে নিয়ে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) পদে আমজাদ হোসেনকে লিখিতভাবে নিয়োগ দেন। ২০১৪ সালে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক ও কমিটির একজন সদস্য হাতিয়ে নিয়ে রুহুল আমিনকে সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগারিক) হিসাবে মৌখিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর এনামুল হকের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে এনামুলকে সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগারিক) পদে লিখিতভাবে নিয়োগ দিয়ে ২০১৬ সাল থেকে তাকে পাঠদান শুরু করান।
অভিযোগকারী শিক্ষক এনামুল হক বলেন, নিয়োগের পর থেকে বিনা বেতনে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে পাঠদান করিয়েছি। ২৩ সালে হটাৎ করে বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ আমার কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি তাদের দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় আমাকে আর বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শুনলাম বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ নাকি আমার পদে অন্য একজনকে নিয়োগ দিয়েছে।
আমজাদ হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। আমি ২০২০ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ে পাঠদান করেছি। এরপর প্রধান শিক্ষককে আমার বেতন—ভাতা ও নিয়োগ স্থায়ীকরণে জন্য বার বার বললে তিনি কোন কর্নপাত করেননি। একপর্যায়ে আমি অসহায় দিশেহারা হয়ে বিদ্যালয় থেকে চলে আসি।
রুহুল আমিন বলেন, গ্রন্থাগারিক পদের জন্য প্রধান শিক্ষক ও একজন সদস্য আমার কাছ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েও নিয়োগপত্র দেননি। এরপর ওই পদে অন্যজনকে নিয়োগ দিয়েছে।
আরেক শিক্ষক শাহিদা আক্তার জানান, ২০০৬ সালে এক লাখ টাকা নিয়ে আমাকে সমাজ বিজ্ঞান পদে মৌখিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর থেকে আমি পাঠদান শুরু করি এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত ছিলাম। এরমধ্যে আমি বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষকে বার বার নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা বললে তারা নিয়োগপত্র দেননি। আবার আমার পদে টাকার বিনিময়ে অন্য একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন।
অভিযোগকারী চার শিক্ষকের দাবি— ওই বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে বেশ কয়েক বছর তারা চাকরি করে প্রতারিত হয়েছেন। তাদের চারজনের প্রায় ৮ লাখ টাকা প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন মিলে আত্মসাৎ করেছে। দ্রুত এসব ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবাদপুকুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. আসমাউল হুসনা বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোন টাকা নিইনি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী জাহিদুল ইসলামের বক্তব্যের জন্য মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান আছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।