কৃষি বিভাগের দায়সারা অভিযান,নেই কোন কঠোর পদক্ষেপ | Daily Chandni Bazar কৃষি বিভাগের দায়সারা অভিযান,নেই কোন কঠোর পদক্ষেপ | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৮ অক্টোবর, ২০২৪ ০৩:০৮
কৃষি বিভাগের দায়সারা অভিযান,নেই কোন কঠোর পদক্ষেপ
নিজস্ব প্রতিবেদক

কৃষি বিভাগের দায়সারা অভিযান,নেই কোন কঠোর পদক্ষেপ

বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের সব গুলো জেলা উপজেলা,ইউনিয়ন এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছেয়ে গেছে ভেজাল ও নিম্নমানের কীটনাশক এবং ফার্টিলাইজারে। এসব ভেজাল ও নিম্নমানের কীটনাশক এবং ফার্টিলাইজার জমি ও ফসলে প্রয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সাধারণ কৃষকেরা। ভেজাল ও নিম্নমানের কীটনাশক এবং ফার্টিলাইজার সংরক্ষণ ও বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেছেন বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা উপপরিচালক জানায় যে,ভেজাল ও নকল কীটনাশকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে।
 
এতে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা,উপজেলা,ইউনিয়ন এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এসব ভেজাল ও নিম্নমানের কীটনাশক এবং ফার্টিলাইজার উৎপাদন এবং বাজারজাতকারীদের নিয়ে একটি অনুসন্ধানী টিম কাজ করছে। এই অনুসন্ধানে দেখা যায়,কৃষি বিভাগের কেঁচো খুড়তে যেন অজগর সাপ বের হবার মতো অবস্থা। বাংলাদেশের সকল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে সম্পর্কিত দুর্নীতি অবৈধ কাজ ধরাছোঁয়ার বাহিরে। কারণ হিসাবে দেখা যায়,মান্দাতা আমলের জারিকৃত কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত যে সব আইন বর্তমানে আছে সেই সব আইনে অপরাধীদের সাজা অনেক কম। আর এজন্যই অপরাধীরা বার বার এগুলো অবৈধ কাজ করেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে পুনঃরায় এসব অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় শুধু কীটনাশক,ফার্টিলাইজার নয় অবৈধ বীজ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
 
তিনি আরও জানায়,নামী-দামী কোম্পানীর কীটনাশক ওষুধ নকল করে বাজারজাত করে আসছে একটি চক্র দীর্ঘ দিন থেকেই। আবার নামীদামি অনেক কোম্পানী আছে যেগুলো দুই-তিনটি কীটনাশক কিংবা ফার্টিলাইজারের অনুমোদন নিয়ে রাতারাতি বনে গেছে বড় বড় কোম্পানির মালিক। অথচো নিজের নামে নেই একটিও কীটনাশক এবং ফার্টিলাইজার উৎপাদন রেজিষ্ট্রেশন নিয়েছেন অন্যের লাইসেন্স ভাড়া করে। 
 
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য,পিটাকে অনুমোদন বা রেজিষ্ট্রেশন না পেতেই অনুমোদিত কীটনাশক বাজারে বিক্রয় করে কৃষকের হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। জেলা কিংবা উপজেলা কৃষি বিভাগের জানা নেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় অনুমোদন,অনুমোদিত কীটনাশক ও ফার্টিলাইজার কোম্পানির তালিকা বা ডিপো।  
 
অভিযোগ রয়েছে,অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে,এসব অবৈধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া হয় মাসোহারা। শুধু কৃষি বিভাগ নয় এসব অবৈধ কাজের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন সিন্ডিকেট কিছু সংবাদকর্মী। তাঁরাও পাচ্ছেন নিয়মিত মাসোহারা। এগুলো অনুসন্ধান করতে গিয়ে পরতে হচ্ছে নানা হয়রানি এবং হুমকির মুখে। সম্প্রতি,বগুড়া জেলার ধনুট,নন্দীগ্রাম মহাস্থান,নাটোর জেলার সিংড়া,বরাইগ্রাম,জয়পুরহাট এবং গাইবান্ধায় সার ও কীটনাশকের দোকানে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং ভ্রাম্যমান আদালত। এই দোকান থেকে সম্প্রতি জব্দ করা হয় সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেডের বেশ কিছু নকল কীটনাশক। সিনজেনটার স্থানীয় প্রতিনিধি ওই দোকানে গিয়ে নকল ওষুধ সনাক্ত করে। এরমধ্যে রয়েছে ভিরতাকো,নমিস্টার ট্রপ,থিয়োভিট,গ্রেজিন ও ডলিয়াম ফ্লেক্সি। এবং এমিনেন্স কোম্পানির নকল কীটনাশক তৈরির কারখানা। বাজারজাত করার অভিযোগে বগুড়া জেলার ধনুট এবং শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান বাজারে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে।  
 
এছাড়াও একটি অসাধু চক্র উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে বগুড়াসহ,জয়পুরহাট,রংপুর,ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলায় ভারতীয় কীটনাশকসহ সকল ও ভেজাল ওষুধ সরবরাহ করছে বলে একাধিক সূত্র জানায়। ব্যবসায়ীরাও অধিক মুনাফার আশায় এসব ওষুধ বিক্রি করছে। শুধু ভেজাল ও নকল কীটনাশকই নয়। এঅঞ্চলে তৈরি হচ্ছে,মাছ,হাঁস-মুরগী ও গরু-ছাগলের নকল ওষুধ।
 
অপরদিকে নীলফামারীর ডিমলায় নকল ও ভেজাল দস্তা সারে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। নিম্নমানের কীটনাশকও ছড়িয়ে পড়ছে বাজারে। এঅবস্থায় ফলন বিপর্যয়,উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ ঠেকাতে দিশেহারা হয়ে পড়ছে কৃষকরা। দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই ভেজাল রোধে কার্য্যকর পদক্ষেপ না নিলে চলতি রবি মৌসুমে আলু,পেঁয়াজসহ অন্যান্য চাষাবাদে উৎপাদন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা।
 
এছাড়া আরো জানা যায়,উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়,সার ব্যবসায়ীদের অনেকে বেশি লাভের আশায় ভেজাল ও নকল দস্তা সার এবং নিম্নমানের কীটনাশক অবাধে বিক্রি করছেন। আসল-নকলের বিষয়টি যাচাই না করে তাদের কাছ থেকে সার ও কীটনাশক কিনছেন অধিকাংশ কৃষক। জমিতে ব্যবহারের পর কৃষকরা বুঝতে পারছেন এসব ভেজাল সার ও নিম্নমানের কীটনাশকের কার্যকারিতা। আর ছোট-বড় হাট-বাজার গুলো ছাড়াও এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট ছোট দোকান গুলোতেও অত্যন্ত নিম্নমানের ভেজাল সার এবং নামি-বেনামি কোম্পানির কীটনাশক বিক্রি করা হচ্ছে। যার ফলে আলু,পেঁয়াজ,শাকসবজি ও ভুট্টা খেতের আগাছা এবং ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমনে বাড়তি ফলনের আশায় কম দাম ও নজরকাড়া মোড়ক দেখে এসব কীটনাশক ও সার কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ কৃষকরা। শুধু তাই নয়,সারের নতুন বস্তা খুললে দেখা মিলে সারে মিশ্রিত গুড়ি পাথরের গুঁড়া,ইটের গুঁড়া ও বালুর মিশ্রণ।