সোনাতলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও নির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিমুলক তথ্য ছড়ানোর ঘটনায় রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০ অক্টোবর রবিবার প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ ইমরান হোসাইন লিখন বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, উক্ত মামলায় মোঃ লতিফুল ইসলাম, ফয়সাল হোসেন ও তৌহিদ নামের ব্যাক্তিকে আসামী করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সোনাতলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকা ও বাংলাটিভির বগুড়া জেলা প্রতিনিধির নামে উক্ত তিন ব্যাক্তির ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্নসময় নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছাড়ানো হয়েছে, যা এখনো চলমান রয়েছে। এ কারনে একজন সম্মানী ব্যাক্তি ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে তাই আদালতের স্বরণাপন্ন হয়ে দোষিদের আইনের আওতায় নিয়ে দ্রুত শাস্তির জন্য আবেদন জানায়।
এ বিষয়ে ইমরান হোসাইন লিখন বলেন, লতিফুল ইসলাম, ফয়সাল খন্দকার ও তৌহিদ আহমেদ তাদের ব্যাক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে আমার নামে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কারন তাদের ব্যাক্তিগত স্বার্থে বাধা হওয়ার কারনেই আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
চলতি বছরের ৯ই মার্চ উৎসবমূখর পরিবেশে সোনাতলা প্রেসক্লাবের ভোট হয়। এতে এক তৃতিয়াংশ ভোট বেশি পেয়ে ইমরান হোসাইন লিখন সভাপতিসহ তার পূর্ণ প্যানেল বিজয়ী হয়। এতে করে পরজিতরা ইর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন সময় নানা ধরনের ফন্দি তৈরি করে একটি গন্ডগোল সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের একটি অহেদুক ইস্যু তৈরি করে রাতারাতি একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন। যা প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রকে চরম অবমাননা করা। গঠন তন্ত্র অনুযায়ী প্রেসক্লাবের কোন সদস্যের বিরুদ্দে কোন অভিযোগ আসলে তাতে চিঠির মাধ্যমে অবগত করতে হবে। অত্র চিঠির জবাব সন্তোসজনক না হলে নিয়ম অনুযায়ী শুধু অভিযুক্ত ব্যাক্তির বিরুদ্ধেই সাংগঠনিক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু পরাজিতরা এসব নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন। অর্থাৎ ভোটে নির্বাচিত একটি পূর্ণ কমিটিকে কোনভাবেই ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষমতা সাধারণ সদস্যরা রাখেনা। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানাকে অবগত করা হয়েছে। এতে করে প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রকে অবমাননা করা হয়েছে।
সভাপতি ইমরান হোসাইন লিখন আরো বলেন, প্রেসক্লাবের মেঝেতে টাইলস লাগানোর জন্য ব্যাংক থেকে ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছিল কিন্তু জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া বরাদ্বের ১ লক্ষ টাকার কাজ ঠিকাদারের মাধ্যমে করে দেয়ার কথা। সেকারনে উত্তোলনকৃত ৮০ হাজার টাকা নির্বাহী কমিটির মৌখিক স্বীকৃতির মাধ্যমে ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজের কাছেই রেখে দেয়া হয়েছিল কারন জেলা পরিষদের কাজ যতোটুকু হবে তার বাকি অংশ উত্তোলনকৃত টাকা দিয়ে সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু উত্তোলনকৃত টাকা নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে সদস্যদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তাৎক্ষনিকভাবে ব্যাংক একাউন্টে সম্পুর্ণ টাকা জমা দেয়া হয় এবং জমা রশিদ প্রেসক্লাবের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে দিয়ে দেয়া হয়। এবং প্রেসক্লাব সংস্কারের জন্য বিএনপির দেয়া ৫ হাজার এবং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সোনাতলা শাখার দেয়া ৫ হাজার মোট ১০ হাজার মধ্যে আসবাবপত্র মেরামত বাবদ এক হাজার টাকা খরচ করে অবশিস্ট ৯ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দেয়া হয়। তিনি বলেন প্রেসক্লাব ফান্ডের একটিও টাকাও আমার কাছে নেই। অর্থাৎ এমন অহেতুক বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারের জন্যই রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ইমরান হোসাইন লিখন আরো জানায় প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র বিরোধী নানা ধরনের কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকা ও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ হওয়ায় প্রথমে তাকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সাময়ীক বরখাস্থ করা হয়। এবং কেনো তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যহতি প্রদান করা হবেনা তা জানতে চেয়ে দুই দিন সময় বেেঁধ দিয়ে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্তু উক্ত পত্রটি গ্রহণ করলেও দুইদিন তথা অদ্যবদি পর্যন্ত কোন জবাব দাখিল করেনি। একারনে নির্বাহী কমিটির এক বৈঠকের সিদ্ধান্তে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোঃ লতিফুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে অব্যহতি দেয়া হয়। এবং তার বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
মামলায় উল্লেখিত ১ নং আসামী মোঃ লতিফুল ইসলাম ডিবি পরিচয় দিয়ে সোনাতলা উপজেলার আগুনিয়াতাইড় এলাকার সাবেক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তার স্ত্রীকে মারধর করে বিছানার নিচে থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে সটকে পরে। কিন্তু লতিফুল ইসলামকে চিনতে পেরে তফিজার ইসলাম সোনাতলা প্রেসক্লাবে অভিযোগ করে। এঘটনায় প্রেসক্লাবের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসাইন লিখন সভাপতির অনুমতিক্রমে প্রেসক্লাবে একটি শালিশের আয়োজন করে। এসময় লতিফুল তার দোষ স্বীকার করে ১০ হাজার টাকা ফিরে দেয় এবং মামলা না করতে অনুরোধ করেন। এছাড়া প্রেসক্লাবের উন্নয়নের জন্য দেয়া নগদ অর্থ ও ইফতার মাহফিলের সমুদয় অর্থ আত্মসাত করেন। এসব টাকা প্রেসক্লাবের একাউন্টে জমা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তিনি এসব ফন্দি তৈরি করে ফেসবুকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে অপপ্রচার চালায়।
২ নং আসামী ফয়সাল খন্দকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নিতির অভিযোগ আসলে তা যাচাই বাছাই অন্তে তাকে যায়যায়দিন পত্রিকার সোনাতলা উপজেলা প্রতিনিধি থেকে কতৃর্পক্ষ অব্যহতি দেয়। কিন্তু ফয়সাল মনে করেন যে, বগুড়া প্রতিনিধি মোঃ ইমরান হোসাইন লিখনের ইঙ্গিতেই তাকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রেসক্লাবের উন্নয়নের জন্য ৮০ হাজার টাকা সবার মধ্যে বিতরণ করে দেয়ার প্রস্তাব আনেন ফয়সাল কিন্তু সভাপতি তা প্রত্যাখান করে প্রেসক্লাবের উন্নয়নের জন্য তার সিদ্ধান্তে বহাল থাকেন এসব কারনে ফয়সাল ক্ষিপ্ত হয়ে। তার ফেসবুক ওয়ালে সভাপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায়।
৩ নং আসামী তৌহিদ একজন নতুন সাংবাদিক। প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সদস্য হওয়ার কোন অবস্থায় তিনি পৌছাননি। তাই তৌহিদকে প্রেসক্লাবের সদস্য অন্তর্ভূক্ত করে না নেয়ার জন্য ১ ও ২ নং আসামীর সাথে যোগ দিয়ে তিনিও তার ফেসবুক ওয়ালে অপপ্রচার চালায়।
উল্লেখ্য গুটিকয়েকজন ব্যাক্তি কর্তৃক সোনাতলা উপজেলার একমাত্র প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানোর কারনে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিমধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।