রংপুর নগরীতে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমের প্রয়োজনীয় উপকরণ দাঁড়িয়ে থাকলেও নগরবাসীর কোনো কাজে আসছে না। শুরুতেই ভুল নকশায় প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয় করে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও সঠিক সিস্টেম চালু করতে নতুন করে আরো ৫ লাখ ব্যয় করা হয়েছে।
নগর ভবনের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মহানগরীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে পরীক্ষামূলকভাবে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম চালু করতে কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ২৭ জুন। নগরীর জাহাজ কম্পানি, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় ও লালকুঠি মোড়ে স্থাপন করা হয় স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম।
এ জন্য ডিজিটাল ট্রাফিক লাইট ম্যানেজম্যান্ট প্রকল্পের আওতায় ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ১১০ টাকা মূল্যের একটি প্রকল্প হাতে নেয় রংপুর নগর ভবনের প্রকৌশল বিভাগ। দরপত্র আহŸান শেষে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ঢাকার মেসার্স সাঈদ মঞ্জুরুল কবির নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী সেই প্রকল্পের কাজ শেষও হয় আরো ৬ মাস আগে। এতদিন পার হলেও সেই ডিজিটাল সিস্টেম কোনো কাজে আসছে না।
নগর ভবনের একটি সূত্র বলছে, মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের নকশা অনুযায়ী এই কাজ করা হয়েছিল। যে প্রক্রিয়ায় কাজ হয়েছে তা দুপাশে করার বদলে একপাশে করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, বরং দুর্ভোগ বাড়বে। এই কারণেই ট্রাফিক বিভাগ সেই কাজ নগর ভবনের কাছ থেকে বুঝে নেয়নি।নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রফিক পুলিশের দেওয়া ফরমেটে দরপত্রের পর কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর তারা ত্রæটি দেখার কারণে সেটি উদ্বোধন করা হয়নি। পরে নতুন করে ফরমেট দেওয়া হয়েছে। তাতে বাড়তি আরো ৫ লাখ খরচ হয়েছে।এদিকে, এই ভুল কাজের জন্য নগর ভবন দুষছেন ট্রাফিক বিভাগকে আর ট্রাফিক বিভাগ বলছে, কাজটি করেছে সিটি করপোরেশন।
নগর ভবনের আইটি শাখা সূত্র জানায়, পুরো কাজটি রংপুর মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের পরামর্শে করা হয়েছিল। ট্রাফিক বিভাগ চেয়েছিল সিগন্যালটি হবে রাস্তার দুই পাশে। উদ্বোধনের আগে ট্রাফিক বিভাগ থেকে পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, কাজটি এক ফেজের (একপাশে) হয়েছে। সে কারণে তারা কাজ বুঝে নেয়নি। উদ্বোধন করাও সম্ভব হয়নি।
রেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর জাহাজ কম্পানি, লালকুঠি মোড়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমের উপকরণ আছে কিন্তু সংযোগের কোনো অস্তিত্ব নেই। লাইট, তার স্ট্যান্ড, সিগন্যালটি কোনোটিই নেই। কখনো আলো জ্বলতে দেখেনি নগরবাসী। নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, কাজ শেষে কিছুদিন পরীক্ষামূলক চালানো হয়েছে এই ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত ব্যক্তি মো. জেহাদ হোসেন বলেন, ‘টেন্ডার অনুযায়ী আমরা কাজ শেষ করেছি। কাজ হস্তান্তরের সব প্রক্রিয়া শেষে সিটি করপোরেশন থেকে নতুন করে আরো একটি করে ফেজ বা সংযোগের কথা বলা হয়েছিল। বাড়তি অর্থ খরচ করে তাও করে দিয়েছ আমরা। আমাদের আর কোনো দায় নেই।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর জাহাজ কম্পানি, পায়রা চত্বর, কাচারী বাজার, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়, মেডিক্যাল মোড়ে হাতে লাঠি আর বাঁশি নিয়ে যানজট নিরসনের দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। এতে নগরীতে যানজট বেড়েই চলছে। দুর্ঘটনা বাড়ার পাশাপাশি পথচারী ও যানবাহন চলাচলের ঝুঁকিও বাড়ছে।
নগরীর হাজাজ কোম্পানি মোড়ে দায়িত্বর ট্রাফিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করে জানান, ডিজিটাল সিগন্যাল রেডি দেখেছি, সিগন্যালের ওপর সিসি ক্যামেরাও দেখেছি, এখন কিছুই নাই। কবে চালু হবে জানি না। আমরা হাতের ইশারাতেই আমাদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছি। ডিজিটাল সিগন্যাল থাকলে হলুদ, লাল আর সবুজ বাতির সংকেতেই খুব সহজে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যেত, যেটা অন্যান্য বিভাগীয় শহরে আছে। এতে একদিকে যেমন যানজট ও দুর্ঘটনা কম হত, অন্যদিকে আমাদের আর একটানা রোদে দাঁড়িয়ে কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করতে হত না। সবদিক থেকেই সুবিধা হত।
রংপুর সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু জানান, টাকা আমাদের কিন্তু মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। কাজ শেষও হয়েছিল কিন্তু পরে তারা বলেছে একপাশে হয়েছে। সেটার কাজও করে দেওয়া হয়েছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের আইটি শাখার ইনচার্জ বেলাল হোসেন বলেন, ‘যে ভুল ছিল সেটা ঠিক করে কিছুদিন চালানো হয়েছে। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের সময় সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। গুটি বা স্ট্যান্ড আছে, সংযোগও আছে বাইরে লাইট ও তার নেই।’ সেগুলো ঠিক করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।