ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়ানোর অভিমানে বিষপান করে মিম আক্তার (১৭) নামে এক নারী আত্মহত্যা করেছেন। এমন ঘটনা ঘটেছে নওগাঁর রাণীনগরে। সোমবার রাতে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন মিম আক্তার। তিনি রাণীনগর উপজেলার মালশন গ্রামের আসাদুল প্রামানিকের মেয়ে।
মিমের পরিবারের অভিযোগ- গত কয়েক মাস যাবৎ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিমের সাবেক স্বামী প্রবাসী হেলাল সরদার (২৭) নামে যুবক আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়াচ্ছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে অপমান সহ্য করতে না পেরে মিম আত্মহত্যা করেছে। অভিযুক্ত হেলাল সরদার একই এলাকার আকনা গ্রামের মকলেছুর সরদারের ছেলে।
স্থানীয় ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আকনা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী হেলাল সরদারের সাথে একই এলাকার মালশন গ্রামের মিম আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় পারিবারিক কলহের জেরে গত ৭ জুলাই দু’জনের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে হেলাল “মিম আক্তার” নামে একটি ফেসবুক আইডি খুলে সেখানে মিমের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতে থাকে। শুধু ফেসবুকই নয় হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে মিমের অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে। এমনকি মিমের হোয়াটসঅ্যাপে এসব ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে তাকে উত্যক্ত করে হেলাল। পরে মিম তার ব্যবহৃত ফোনটি ভেঙ্গে ফেলে। ঘটনাটি পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে জানাজানি হলে সোমবার রাত ৮টার দিকে মিম বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ২টার দিকে মারা যায় মিম।
মিমের বাবা আসাদুল প্রামানিক বলেন, আমার মেয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকেই হেলাল নানাভাবে বিরক্ত ও উত্যক্ত করে আসছিল। তার নামে ফেসবুক আইডি খুলে নানা রকম ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতো। আমার মেয়েকেও হোয়াটসঅ্যাপে সেসব দিয়ে ভয়ভ‚তি ও হুমকি দিয়ে বলতো তোর জীবন শেষ করে দিবো। এসব জানাজানি হলে আমার মেয়ে সবার অজান্তে ঘরে বিষ খায়। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মেয়েটা মারা যায়। এসব ছবি-ভিডিও ছড়ানোর কারণে আমার মেয়ে অপমান ও অভিমানে আত্মহত্যা করেছে। হেলালসহ যারাই জড়িত থাক, তাদের সবার কঠিণ শাস্তি চাই। এ ঘটনায় আমরা থানায় মামলা করবো।
এদিকে অভিযুক্ত প্রবাসী হেলাল সরদারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তা সম্বব হয়নি। তার বাড়িতে গেলে তার বাবা মকলেছুর সরদার বলেন, মিমের পরিবার থেকে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা। আমার ছেলে যদি আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে থাকেন, প্রমাণ হতে শাস্তি হবে।
এ বিষয়ে রাণীনগর থানার ওসি মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবস্থান মিম আক্তার মারা গেছেন শুনেছি। যেতেতু নওগাঁ সদর হাসপাতালে মারা গেছেন, যার কারনে সদর থানা পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।