সিংড়ায় জোরপূর্বক পুকুর দখলের অভিযোগ | Daily Chandni Bazar সিংড়ায় জোরপূর্বক পুকুর দখলের অভিযোগ | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৬ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:৪৮
সিংড়ায় জোরপূর্বক পুকুর দখলের অভিযোগ
উপজেলা সংবাদদাতা, সিংড়া, নাটোরঃ

সিংড়ায় জোরপূর্বক পুকুর দখলের অভিযোগ

নাটোরের সিংড়ায় দেখভাল কমিটির অনিয়ম, ভেলকিবাজির শিকার মতিয়ার রহমানের পরিবার। 
গ্রামবাসি ও অনেকটা প্রতারণার শিকার বলে মনে করছে অনেকে। জমি দখল, পুকুর দখল করে গ্রামের নামমাত্র উন্নয়নের ফিরিস্তি দেখিয়ে এই কমিটির কয়েকজন হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। 
প্রতি বছর উন্নয়নের নামে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে অর্থ তোলার অভিযোগ ও রয়েছে। দেখভাল কমিটির কারসাজি ও ভেলকিবাজির শিকার মতিয়ার রহমান পরিবার প্রায় ১ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন। 
জানা যায়, নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের জনবহুল গ্রাম মৌগ্রাম। ২০০৫ সালে মৌগ্রামে দেখভাল কমিটি গঠন করা হয়।  
এই কমিটি গ্রামের পুকুর, জমি অল্প টাকার বিনিময়ে কিংবা জোরপ‚র্বক দখল করে দেখভাল কমিটিকে ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতি বছর হাতিয়ে নেয়। গ্রামের সিন্ডিকেট তৈরি করে এ কমিটি নামমাত্র গ্রামের উন্নয়ন করে আসছে। কমিটির বর্তমান সভাপতি মাসুদ। ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সবাই একেক সিন্ডিকেট। এরাই গ্রামকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিচার, শালিশ সহ যাবতীয় দেখভাল তাদের দায়িত্ব। আর এ দায়িত্বের মধ্যেই গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট সদস্যরা হলেন, হায়দার পুত্র মাসুদ, মৃত মুনসের পুত্র আ: জলিল, মৃত রজব পুত্র রুবেল, আলমের পুত্র কালু প্রামানিক, মৃত শাহামন পুত্র রেজাউল, মতলেব পুত্র কাবিল। 
জানা যায়, সিংড়া উপজেলার পৌর এলাকার মতিয়ার রহমান ঐ গ্রামে প্রায় ৮ একর পরিমান একটি পুকুর ক্রয় করেন। কমল কামিনী চৌধুরানী নি: সন্তান অবস্থায় মারা গেলে তিন ভাগ্নে ওয়ারিশ সুত্রে মালিক হন তিনি। দলিল সুত্রে মতিয়ার রহমান সাবেক ৯ একর ৩৮ শতাংশ, হাল ৭ একর ৫৪ শতাংশ জমির মালিক হন। ১৯৮৯-৯০ সালে খাজনা খারিজ করেন মতিয়ার রহমান। তারপর থেকে ভোগ দখলে ছিলো। আরএস খতিয়ান নং ১২০, আর এর দাগ নং ৭২৪, শ্রেণি পুকুর, পরিমান ৭ একর ৫৪ শতাংশ জমি। বাংলার ১৩৯৪ সাল হতে ১৪২২ সাল পর্যন্ত ভুমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে। মতিয়ার রহমান মৌগ্রামের রেজাউল করিমকে চুক্তিবদ্ধ হয়ে পুকুরটি লিজ দেয়। 
খাজনা খারিজ পরিশোধ থাকা অবস্থায় ২০১২ সালে মৌগ্রাম দেখভাল কমিটি রেজাউলকে ব্যবহার করে পুকুর দখলে নেয়। তারপর থেকে লিজের টাকা বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন কমিটির সহ সভাপতি , ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক বাগিয়ে নিয়ে মৌগ্রাম দেখভাল কমিটি বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাদেরই শিকার মতিয়ার রহমান পরিবার। 

মতিয়ার রহমানের পুত্র আবুল হাসনাত জানান, ২০১২ সাল থেকে ঐ দেখভাল কমিটি লিজের টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়। তাদের বারবার কাগজপত্র নিয়ে বসার কথা বলা হলেও তারা গড়িমসি করে। এর আগে তারা নামমাত্র লিজের টাকা দিতো। লিজের টাকা বন্ধ করে দেয়ার পর পুকুরে গেলে মারপিট, খুন জখমের হুমকি দেয় দেখভাল কমিটি। আমাদের পরিবারকে, আব্বা কে পুকুরে আসলে হুমকি, খুন জখমের হুমকি সহ নানা হয়রানী ও পেরেশানি দেয়। এমতাবস্থায় ১১ আগষ্ট ২০২৩ সালে আমার পিতা মতিয়ার রহমান স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। 
আবুল হাসনাত আরো বলেন, ১২ অক্টোবর সেনাবাহিনী এবং সহকারী কমিশনার ভ‚মি সিংড়ার নিকট আমি অভিযোগ দায়ের করি। 
অভিযোগের পর দেখভাল কমিটিকে ডেকে নেয় এবং উভয় পক্ষের শালিশে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে পুকুরের ভোগ দখল এবং আমার পরিবারের হক দখল স্বত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। 
স্থানীয়রা জানায়, মসজিদের নামে কমিটি করে অর্থ লুটপাট করে আসছে দেখভাল কমিটি । তারা হিসাব ঠিক মত দেয় না। মামলা সহ পুকুর সংস্কার নামে গ্রামবাসীর নিকট প্রতি বছর চাঁদা তুলে প্রতারনা এবং অর্থ আত্মসাৎ করে। তাছাড়া অর্থের বিনিময়ে পুকুরের চারপাশে মাটিকেটে ঘরবাড়ি নির্মান করে দেয় দেখভাল কমিটি। তাদের ভয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায় না। 
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও দেখভাল কমিটির সদস্য আব্দুল জলিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেন।