বগুড়ায় মৃৎশিল্প প্রায় এখন ধ্বংসের মূখে | Daily Chandni Bazar বগুড়ায় মৃৎশিল্প প্রায় এখন ধ্বংসের মূখে | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:৪৬
বগুড়ায় মৃৎশিল্প প্রায় এখন ধ্বংসের মূখে
নিজস্ব প্রতিবেদক

বগুড়ায় মৃৎশিল্প প্রায় এখন ধ্বংসের মূখে

বগুড়ার প্রায় উপজেলায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে বা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তের মূখে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাটির তৈরী জিনিসপত্রের চাহিদা শহরের পাশাপাশি গ্রামেও কমে গেছে। ফলে এই শিল্পের সাথে জড়িত পাল সম্প্রদায়ের মানুষ দিন দিন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অনেকেই ইতিমধ্যে পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশার পথ খুঁজছে। বিগত সময়েপালপাড়ায় আগে যে ব্যস্ততা দেখা যেতো, সে ব্যস্ততা এখন আর চোখে পড়ে না। সারি সারি মাটির তৈরী জিনিসপত্র পর্ষা সাজিয়ে রাখত। এখন সেসব আর তেমন ভাবে চোখে পড়ে না। মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা আগের মত না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম, সিলভার ও প্লাস্টিকের তৈরী জিনিসপত্র।
 
প্রাচীন সময়ের গ্রাম-বাংলার অতীত ঐতিহ্যের সথে মিশে আছে মৃৎশিল্পের কারুকার্য্য। এমন এক সময় ছিল যখন পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয়তায় প্রায় কাজেই মাটির তৈরী জিনিসের বিকল্প ছিল না। তাই মৃৎশিল্পীরা এক সময়ে শুধুমাত্র নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে শুকনা খড়, লাকড়ি, মাটি, বালি ও পানির সাহায্যে তৈরী করতেন দধির পাত্র, পিঠা খোলা, ভাতের পাতিল, পাতিলের ঢাকনা, তরকারি রান্নার কড়াই, রসের হাড়ি, ধুপ জ্বালানির পাত্র, মুড়ির পাতিল, বাতি জ্বালানি পাত্র, জলকান্দাসহ শিশুদের জন্য বিভিন্ন রকমের মাটির তৈরী খেল না। কিন্তু কালের পরিক্রমায় বাহারি রকমের বা ডিজাইনের প্লাস্টিক, মেলামাইন, ষ্টিল, বিদ্যুৎ চালিত রাইসকুকার, সিরামিক ও সিলভারের জিনিস পত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মাটির তৈরী জিনিস পত্রের চাহিদা একেবারে কমে গেছে। যার কারণে এই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত মানুষেদের একদিকে যেমন কমে গেছে কাজের পরিধি, তেমনি কমে গেছে উপার্জন কর্ম। জীবন-জীবিকার জন্য বাধ্য হয়ে অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আধুনিক জিনিস পত্রের ভিড়ে মাটির দাম বৃদ্ধিসহ নানা সংকট এই মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে বলে জানায় মৃৎশিল্পীর ব্যক্তিরা। পেশার চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় মৃৎশিল্পীদের বর্তমান প্রজন্মের কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করে ফেলছে।
 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাটির অভাব এবং জ্বালানীর দাম বৃদ্ধির ফলে এই মৃৎশিল্পের সাথে যুক্ত থাকা পাল সম্প্রদায়ের মানুষ গুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বগুড়া গাবতলী উপজেলার মহিষাবান পালপাড়া গ্রামের প্রায় শতাধিক পাল পরিবার মৃৎশিল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রায় ৫০টি পরিবার এখনও এই পেশার সাথে যুক্ত রয়েছে। এই পেশাকে আশ্রয় করে জীবন-জীবিকা ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগান দিয়ে আসছে। এই পালপাড়ায় একশত বছরেরও অধিক সময় ধরে এই মৃৎশিল্পের কাজ চলে আসছে। পালপাড়ায় আগে যে ব্যস্ততা দেখা যেতো সেই ব্যস্ততা এখন আর দেখা যায় না। সারি সারি মাটির তৈরি জিনিসপত্রগুলো যেমন পর্ষা সাজিয়ে রাখতো, এখন তেমন আর চোখে পড়ে না।
 
অপরদিকে ৫০টি পরিবার এখনও বাপ-দাদার এই মৃৎশিল্পকে ধরে রেখেছে। কেউ দইয়ের পাতিল তৈরি করছে। কেউ হাঁড়ি-পাতিল সহ ৩০-৩৫ রকমের মাটির জিনিসের কাজ করে যাচ্ছে। আর দইয়ের পাতিল হাঁড়ি পাতিল রোদে শুকানো সহ সব ধরনের কাজে পুরুষদের সহযোগীতা করছেন পরিবারের নারী ও শিশুরা। মহিষাবান গ্রামের পালপাড়ার গোপাল পাল, সন্তোষ পাল, নির্মলা রাণী পাল, পারুল রানী, মাধুরী পাল, গঙ্গা পাল জানায় যে, আমাদের মূল সমস্যা মাটি পাওয়া যায় না, তারপরও যেটুকু পাওয়া যায় সেই মাটির বর্তমান মূল্য অনেক চড়া। অনেক কষ্ট করে দূর দুরান্তর থেকে মাটি সংগ্রহ করতে হয়। মাটির তৈরী জিনিসপত্র তৈরী করেই বা লাভ কি, আগের মত বিক্রি করা যায় না। শুধুমাত্র এখন বাপ দাদার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আমরা এই কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজ করে এখন আমাদের আর সংসার চলে না। পাশাপাশি অনেক ধরনের কাজ করে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। আগে মাটির জিনিসপত্র খুব ভালো ভাবে এখন আর চলে না।
 
এছাড়াও আরো জানায, বাজারে এখন প্লাস্টিক সহ বিভিন্ন রকমের পণ্য পাওয়া যায়।এই কারণেই কেউ আর মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনতে চায় না। আগে পালপাড়ার অনেক পরিবারে এই মৃৎশিল্পর সাথে যুক্ত ছিল। বর্তমান সময়ে অর্ধেক পরিবার এই পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় নিযুক্ত হয়েছে। মৃৎশিল্পর দিকে যদি সরকার ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক আচ্ছা বাবা ভালো আছেন (ডিসি) যদি নজরদিত বা সার্বিক সহযোগিতা করতো এই কাজ করে দু'বেলা দু'মুঠো ডাল ভাত খেয়ে আমরা জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারতাম। এই পেশার সাথে থেকে যদি সংসারই না চলে তাহলে এই পেশা বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিতে হবে বলে জানান তারা।