জাল সনদে চাকুরী করে নওগাঁয় ৬৬ লক্ষ টাকা বেতন পেয়েছেন ১০ শিক্ষক, ধরা-ছোঁয়ার বাইরে অবৈধ নিয়োগদাতারা | Daily Chandni Bazar জাল সনদে চাকুরী করে নওগাঁয় ৬৬ লক্ষ টাকা বেতন পেয়েছেন ১০ শিক্ষক, ধরা-ছোঁয়ার বাইরে অবৈধ নিয়োগদাতারা | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর, ২০২৪ ০১:০০
জাল সনদে চাকুরী করে নওগাঁয় ৬৬ লক্ষ টাকা বেতন পেয়েছেন ১০ শিক্ষক, ধরা-ছোঁয়ার বাইরে অবৈধ নিয়োগদাতারা
আরমান হোসেন রুমন, নওগাঁ:

জাল সনদে চাকুরী করে নওগাঁয় ৬৬ লক্ষ টাকা বেতন পেয়েছেন ১০ শিক্ষক, ধরা-ছোঁয়ার বাইরে অবৈধ নিয়োগদাতারা

নওগাঁ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাল সনদ ব্যবহার করে চাকুরী নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ২০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ১০ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি কোষাগার থেকে অবৈধভাবে ৬৫ লক্ষ ৯৭ হাজার ৩৭৬ টাকা বেতন উত্তোলন করেছেন। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) সনদ যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে এই ভয়াবহ জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। এরপর শিক্ষামন্ত্রণালয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং অবৈধভাবে উত্তোলিত বেতন সরকারি কোষাগারে ফেরত আনার নির্দেশনা দেয়।

তবে, গত দেড় বছরে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ এই বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। বেশ কয়েকজন শিক্ষক এখনও চাকুরীতে বহাল রয়েছেন এবং অবৈধ নিয়োগদাতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এর ফলে সরকারি কোষাগার থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত বেতনের কয়েক কোটি টাকা ফেরত আনা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, গত বছরের ১৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব মো. সেলিম শিকদারের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ৬৭৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষক/কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) যাচাই বাছাইয়ে জাল সনদধারীদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং তাদের পরিচয় প্রকাশ করে এমপিও ও চাকুরীচ্যুত করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ তালিকার তথ্য অনুযায়ী, নওগাঁ সদর উপজেলার শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উম্মে রুহানী নেকটার বগুড়ার জাল সনদে চাকুরী করে ১৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৮৮৭ টাকা, চক আতিথা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাঈদ মো. রশিদুল যোবায়েদ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের জাল সনদে চাকুরী করে ১০ লক্ষ ৩৩ হাজার ২১৮ টাকা, শিকারপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রেফাজ আহম্মেদ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের জাল সনদে চাকুরী করে ৫ লক্ষ ৪০ হাজার ৯৮০ টাকা, এবং কুশাডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অবিনাশ চন্দ্র প্রামাণিক বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের জাল সনদে চাকুরী করে ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৫৫৫ টাকা অবৈধভাবে সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করেছেন।

এছাড়া, পোরশা উপজেলার গাঙ্গুরিয়া ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মো. মাহমুদ হাসান মন্ডল জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী বগুড়ার জাল সনদে চাকুরী করে ৯ লক্ষ ৩৪ হাজার ৯৬১ টাকা এবং নিসকিনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. তোজাম্মেল হক একই প্রতিষ্ঠানের জাল সনদে চাকুরী করে ৮ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৫ টাকা বেতন উত্তোলন করেছেন।

এ ছাড়া আরও অনেক শিক্ষক যারা জাল সনদে চাকুরী নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি এবং অবৈধ নিয়োগদাতারা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

মৌসির (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর) নির্দেশনার পরও অনেক প্রতিষ্ঠান এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। গাঙ্গুরিয়া ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মাহমুদ হাসান মন্ডল বলেন, "উচ্চ আদালতে আপিল করেছি, এখনো পূর্ণাঙ্গ রায় আসেনি, তবে আমি মনে করি কিছু বেঠিক হয়নি।"

এদিকে, নওগাঁ সদর উপজেলার শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উম্মে রুহানী নেকটারও বর্তমানে চাকুরী বহাল রয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, তার সনদ জাল ছিল না এবং সনদ যাচাই-বাছাই করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহফুজা খাতুন জানান, তিনি বিষয়টি জানেন না এবং লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নওগাঁ জেলা কমিটির আহবায়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল বলেন, “বিগত সরকারের আমলে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত শিক্ষক জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরী নিয়েছেন। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সব সনদ যাচাই করলে এই চক্রের কৃতকর্ম উন্মোচিত হবে।”