বগুড়ার নন্দীগ্রামে পুরোদমে শুরু হয়েছে রোপা আমন ধান কাটা মাড়াই। কৃষকের গোলা ভরা ধানে মুখে সোনালী হাসি থাকলেও কপালে দিখা গেছে চিন্তার ভাঁজ। শস্য ভান্ডার হিসেবে বেশ পরিচিত বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষকরা আগাম জাতের ধান কেটেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে আলু চাষে। আলুর চাহিদা বেশি থাকায় এবার আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন নন্দীগ্রামের কৃষকরা। কিন্তু এই আলু চাষের মৌসুমে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েও হতাশ নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষকরা। কারণ এবার নন্দীগ্রাম উপজেলায় কৃষি অফিস অনুমদিত ৩০ জন বিএডিসি ডিলার থাকলেও তাদের তৈরি করা সিন্ডিকেটের কারনে দেখা দিয়েছে বীজ আলুর চরম সংকট। চড়া দাম দিয়েও মিলছে না বীজ আলু ফলে হতাশ হয়ে পড়ছে কৃষক। এ বছর আলু চাষের বাড়তি চাহিদার সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বীজ বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এজন্য খাবার আলুর মতো বীজও বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি দামে। এ অবস্থায় আলুর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম এবার আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ২শ ৫০ হেক্টর। ধান কাটার পর আবহাওয়া অনুকূূল থাকায় নন্দীগ্রামে এবার ব্যাপকভাবে আলু চাষের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন কৃষকরা। কিন্তু শুরুতেই বীজ সংগ্রহে চরম সংকটে পড়েছেন তারা। এই উপজেলায় ৩০জন বিএডিসি ডিলার থাকলেও তাদের তৈরি করা কৃত্রিম সংকটের কারণে বাজারে অ্যাস্টেরিক, ডায়মন্ড সহ কোন জাতের আলুর বীজ অধিক টাকা দিয়েও মিলছেনা। গোপন সুত্রে জানা যায়, ডিলাররা বীজ আলু তুলে অধিক দামে পাশ্ববর্তী উপজেলা গুলোতে বিক্রয় করেছে। আর এতে করে নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষকরা ডিলারদের কাছে বীজ নিতে গেলে বীজ নেই বলে তারা সাফ জানিয়ে দেয়। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, বীজ আলু নেই বললেও কোন কৃষক প্রতি ৪০ কেজির বস্তা ৫ হাজারের বেশি টাকা দাম দিতে চাইলে অসাধু ডিলাররা তাকে রাতের আধারে বীজ পৌছে দিচ্ছে। সরকারের বেধে দেওয়া দাম কে তোয়াক্কা না করে বীজ আলুর সংকট দেখিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা ঠিক এমনি ভাবেই কৃষকদের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আবার কোন কোন কৃষক অগ্রিম টাকা দিয়েও বীজ পাচ্ছেন না। অথচ নির্ধারিত ডিলারদের ‘এ’ গ্রেড আলু বীজ প্রতিমণ তিন হাজার টাকা এবং ‘বি’ গ্রেড দুই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করার কথা। কিন্তু চাহিদার কারণে বাজারে সংকটের অজুহাতে ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছেন বীজ ব্যবসায়ীরা। এদিকে কৃষকরা বিএডিসি আলু বীজ না পেয়ে ব্রাকের আলু বীজের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ফলে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্রাকের নির্ধারিত কতিপয় ডিলাররা নির্ধারিত মূল্যের চাইতে দ্বিগুন দামে বীজ আলু বিক্রয় করে রাতা রাতি হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এবিষয়ে ব্রাক ডিলার শিহাবের সাথে কথা বললে তিনি এই প্রতিনিধিকে জানান, আমি মাত্র ১৫টন ব্রাকের বীজ আলু বরাদ্দ পেয়েছি। এই আলু কাকে দিব আর না দিব সেটা নিয়েই চিন্তাই আছি। এদিকে বিএডিসি ডিলার কোরবান আলীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, কৃষকরা বিএডিসি বীজ নিতে চায় না তাই উত্তোলন করি নাই। উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আলু চাষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। তাই বীজ নিতে ডিলারদের কাছে ভিড় জমান আলু চাষিরা। কিন্তু বীজ আলু না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের। কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রতি বছরই বীজ ডিলারদের নিকট থেকে বীজ সংগ্রহ করে থাকি কিন্তু এবছর নন্দীগ্রাম উপজেলার সকল বীজ ডিলাররা সিন্ডিকেট করে সরকারের বরাদ্দকৃত বীজ আগেই অধিক দামে বিক্রি করেছে এখন আমরা বীজ পাচ্ছিনা। আমরা সাধারণ কৃষকরা সরকার ও কৃষি বিভাগের কাছে জোর দাবী জানাই এসব অসাধু ডিলারদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এবিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. গাজীউল হকের সাথে কথা বললে তিনি জানান আলু বীজের সংকট নেই, তবুও যদি কেউ অভিযোগ করে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।