চলনবিলে পানিফলের বাণিজ্যিক চাষ | Daily Chandni Bazar চলনবিলে পানিফলের বাণিজ্যিক চাষ | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৩:২৪
চলনবিলে পানিফলের বাণিজ্যিক চাষ
তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ, সংবাদদাতাঃ :

চলনবিলে পানিফলের বাণিজ্যিক চাষ

দেশের গ্রামে-গঞ্জে অতিপরিচিত এক ফল পানিফল খাদ্য ও পুষ্টিগুণে এটি মহৌষধি। জলাশয়ে চাষ হয় বলে একে পানিফল বলা হয়। পানিফলের আরেকটি নাম পানি শিঙ্গাড়া। কারণ শিঙ্গাড়া মতো দেখতে। নামের যেমন বাহার, কাজের বাহারও তেমন। এটি স্বাদে পানসে হলেও মানবদেহের জন্য প্রচুর উপকারী। বিগত কয়েক দশক থেকে আমাদের দেশেও পানিফলের চাষ হয়ে আসছে বিচ্ছিন্নভাবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর চলনবিলে  শীতকালীন ফসল পানিফল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। গত বছর পানিফলের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর আরও বেশি জমিতে পানিফল চাষ করছেন চাষিরা। নাটোর জেলার সিংড়ায় এবার পানিফলের ব্যাপক চাষ হয়েছে। পতিত জলমগ্ন জমিতে পানিফল চাষ হয়। ভাদ্র-মাস থেকে মোটামুটি আবাদের দুই মাস থেকেই ফল তোলা শুরু হয়। বর্তমানে পানি ফল বাজারে বিক্রি হয়েছে। প্রতি বিঘায় ২ থেকে আড়াই টন ফলন পাওয়া যায়। সে হিসেবে প্রতি হেক্টরে ১৮-২০ টন পর্যন্ত ফলন হয়। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো  বর্ষজীবী এ জলজ উদ্ভিদ ৪ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। মূলত পানির নিচে মাটিতে থাকে এর শিকড়। পানির ওপর পাতাগুলো ভাসতে থাকে, অনেকটা কচুরিপানার পাতার মতোই। চাষাবাদের ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় তিন হাজার বছর আগে চীন দেশে পানিফলের চাষ হতো। আবার আমেরিকার ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্য এবং ওয়াশিংটনে পানিফল উদ্ভিদকে অনেকেই জলজ আগাছা হিসেবে মনে করত। দেশের বৃহত্তম বিল চলনবিলে নিকট অতীতে অনেক দিঘি, পুকুর, ডোবানালা বা জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবেই পানিফল জন্মাত। পানিফলের ওপর অংশের আবরণ বা খোসা ফেলে কাঁচা ও সিদ্ধ করে দুইভাবেই খাওয়া যায়।
সরেজমিনে নাটোরের সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের  কৈগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে পানিফল সংগ্রহ করছেন কৃষক। প্রতিবছর এই গ্রামে নুন্যতম ৮ থেকে ১০ জন কৃষক  পানিফল চাষ করেন। এবছর তাদের পানিফল চাষের জমির পরিমান প্রায় ২০ থেকে ২২ বিঘা।  গত দুই দশক ধরে এই গ্রামের কৃষকরা বাণিজ্যিক ভাবে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।  আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া অনেক প্রান্তিক কৃষকদের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। স্থানীয়রা জানায়, পানিফল মৌসুম শুরু হলে বিভিন্ন জেলা শহর থেকে পাইকাররা আসেন এ গ্রামে। এলাকায় এ গ্রামকে  কেউ কেউ পানিফলের গ্রাম নামেও চিনেন। কৃষকরা জানায়, প্রায় ৩০ বছর আগে   কৈগ্রামে  প্রথম পানিফলের চাষ শুরু করেন এই গ্রামের কৃষক রইচ উদ্দিন (৬১)। কৃষক রইচ উদ্দিনের সফলতা দেখে এ গ্রামের অনেকেই  ঝুঁকে পড়েন পানিফল চাষে।
কৃষক রইচ উদ্দিন জানান, পুকুর, ডোবা নালায় যেখানে মাছ চাষ ও ধান চাষ হয় না বর্ষাকালে অল্প পরিমান পানি থাকে  এমন পতিত নীচু জমিতে পানি ফলের চাষ ভালো হয়।রইচ উদ্দিন আরো জানান, অল্প খরচে লাভ বেশি হলেও পরিশ্রম করতে হয় বেশি এ ফল চাষে। বিশেষ করে  প্রতি দিনই জমি থেকে ফল সংগ্রহ করতে  হয়। তিনি জানান, আমি অন্য কোন আবাদ করি না। প্রতি বছরই দুই এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে পানিফলের চাষই করি। এবছর এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে চাষ করেছি। ৭ হাজার টাকা লিজ সহ আমার মোট খরচ ১২ হাজার টাকা। নিজে পরিশ্রম করি তাই শ্রমিক খরচ কম।  এবছর তিনি এ জমি থেকে খরচ বাদে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করার আশা করছেন। ওই গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ, ইদ্রিস আলী  ও শহিদ হোসেন জানান, এবার ফলন ও বাজার মুল্য দুটোই ভালো। ১ হাজার ৬০০শ’ থেকে  ২ হাজার টাকা প্রতি মণ পাইকারী বিক্রি হচ্ছে।  আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। শীতের শেষ পর্যন্ত বাজার ঠিক থাকলে গতবছরের চেয়ে বেশি লাভের আশা করছেন তারা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ বলেন, সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের কৈগ্রাম সহ  পৌরসভার চক সিংড়া, সোহাগ বাড়ি,  তাজপুর, কলম  এবং শেরকোল ইউনিয়নের পতিত ও নীচু জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে কৃষকরা পানিফল চাষ করছেন। এতে খরচ ও পরিশ্রম কম, লাভ বেশি। এছাড়া এ ফল চাষে রোগবালাই নাই বল্লেই চলে।  তাই পানি ফল চাষে  আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।  উপজেলা কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।