আদমদীঘিতে কাঁদছে বিজয়ের জীবন্ত স্মারক তালগাছ গুলো | Daily Chandni Bazar আদমদীঘিতে কাঁদছে বিজয়ের জীবন্ত স্মারক তালগাছ গুলো | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১০:১৭
আদমদীঘিতে কাঁদছে বিজয়ের জীবন্ত স্মারক তালগাছ গুলো
মিহির কুমার সরকার, আদমদীঘি, বগুড়াঃ

আদমদীঘিতে কাঁদছে বিজয়ের জীবন্ত স্মারক তালগাছ গুলো

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের পরে বগুড়ার আদমদীঘি থানা নশরতপুর ইউনিয়নের উৎসাহী বীর মুক্তিযোদ্ধারা একটি বিজয় স্মরণী নির্মাণ করতে উদ্যোগ নিলেন। কিন্তু টাকা পাবেন কোথায়। ফিল্ড কমান্ডাররা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ন্যাপ নেতা শিক্ষক আ.ত.ম শামসুল হককে তাদের প্রাণের আকুতি জানালেন। শামসুল হক (পরে নসরতপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ) বললেন ‘তোমরা নশরতপুর রেল ষ্টেশনের উত্তর পাশে লেকের ধারে শ’ দেড়েক তালগাছ রোপন করো।’ বীর যোদ্ধারা ১৭১টি তালগাছ রোপন করলেন। ৫৩ বছরে সেই তালগাছ গুলো বেড়ে উঠলো। ফলে ফলে সুশোভিত হলো। এই গাছ রোপনের কারিগরদের মধ্যে বেঁচে আছেন শুধু যুদ্ধের সংগঠক ও ফিল্ড কমান্ডার সুনিল কুমার সরকার, ফিল্ড কমান্ডার শিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন বিএসসি কমান্ডার আব্দুল হামিদ ও ফ্রন্ট ফাইটার আবু তাহের। আর অধিকাংশ গান স্যালুট পেয়ে বিদায় নিয়েছেন। 
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরম ¯েœহে লালিত জীবন্ত স্মৃতির মিনার ৭১’র ঘাতকের মতো একটা একটা করে হত্যা করছে বগুড়া পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-১। তারা দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য না জেনে মুক্তিযুদ্ধ না মেনে এই জীবন্ত বিজয় স্মৃতি মিনারের পাশ দিয়ে কয়েক বছর আগে হাই ভোল্টেজ লাইন টানে পল্লি বিদ্যুৎ। একের পর এক গাছের সব ডালপালা নির্মম ভাবে কাটা শুরু করে। এতে শতাধিক গাছ মারা যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ও জনগণ বাধা দিলেও শোনেনি। ২৩ জুলাই মাসে নির্মম ভাবে ডাল কাটার পর প্রায় ৭টি গাছ মারা যায়। স্থানীয় জনগণ ও সাংবাদিকরা বাধা দেয়। সব জাতীয় কাগজে এ নির্মম ঘটনা প্রকাশিত হয়। পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির কর্তারা দুটি বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে দিয়ে দায় সারে। ওয়াদা করে আর ডাল পাতা কাটবে না। 
ঘাতক ও স্বাধীনতা বিরোধীরা চুপ থাকে না। আবার বিজয়ের মাসের ১লা তারিখে ঘাতক পল্লি বিদ্যুতের দুপচাঁচিয়া (চৌমুহনি) ডিজিএম অফিসের এজিএম জাহিদুল ইসলামের নির্দেশে আদমদীঘি কেন্দ্রের লাইনম্যান আছাদুল ইসলাম, জামিল হোসেন ও টেকনিশিয়ান হেলাল উদ্দিন একদল ডে লেবার নিয়ে ফলন্ত তালগাছ গুলোর সব ডালপাতা কাটতে শুরু করে। স্থানীয় জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বাধার মুখে হটে যায়। এজিএম হুমকি দিয়ে যায় হয় গাছ থাকবে না হয় লাইন থাকবে। পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি যদি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয় তাহলে যারা গাছ কাটতে বাঁধা দিচ্ছে তাদের গ্রাহকরা দাবড়াবে। জনগণের বিরুদ্ধে গণমামলার হুমকিও দেয় এজিএম জাহিদুল ইসলাম। যারা বাধা দিয়েছিল তাদের বাড়িতে পুলিশ পাঠায়। পল্লি বিদ্যুতের কর্মকর্তারা সব করতে পারে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে শার্টডাউন কর্মসূচী দিয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করেছে। 
বিজয় মাসের প্রথম দিনে বিজয়ের জীবন্ত স্মারক হত্যা করা শুরু করেছে। এই গাছগুলো ডালপালা হারিয়ে যেন কাঁদছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনুছ, বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা রেজোয়ানা হাসানের নিকট বগুড়া আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুরের ১৭১ জন বীরমুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সন্তান সন্ততি ও জনতার দাবী স্বাধীনতা ও বিজয়ের জীবন্ত স্মারক তালগাছগুলি হত্যাকারীদের রাষ্ট্রবিরোধী ও রাষ্ট্রদোহী ও স্বাধীনতা বিরোধী আইনে বিচার চেয়েছে। এই কিংবদন্তী জীবন্ত বিজয় স্মারক রক্ষা করার আবেদন জানিয়েছেন। এই বিষয়ে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল জোনাল ম্যানেজার, লালমনিরহাটের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ও বগুড়ার বন সংরক্ষকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ স্মারককে জাতীয় বিজয় স্মারক ঘোষনার দাবী জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় জনগণ। এ গাছগুলো সন্তানের মত করে বড় করেছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন শাহাদ ও কমান্ডার আবুল কাশেম, ফিল্ড কমান্ডার ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুনীল কুমার সরকার, কমান্ডার মুনছুর রহমান, কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ।
এব্যাপারে বগুড়া পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মনোয়ারুল ইসলাম ফিরোজীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের পল্লি বিদ্যুৎ লাইনের আওতাধীন যে গাছই থাকুক না কেন তা আমরা প্রতি বছর কেটে ছেটে দেয়া হয়। বিদ্যুতের দুটি পোল স্থানান্তরের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বলেন, নশরতপুর স্টেশনের পার্শ্বে ওই দুটি বিদ্যুতিক পোল স্থানান্তরের কোন জায়গা নেই। তিনি আরোও বলেন, দুপচাঁচিয়া উপজেলার একটি রাস্তার পার্শ্বে সারি সারি তালগাছ যে নেসকো কোম্পানি প্রতি বছর কেটে ফেলে সে খবর জানেন, এমন উদাহরণ দেন এই পল্লি বিদ্যুৎ কর্মকর্তা।