সিরাজগঞ্জে এবারও সরিষা চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। গত মৌসুমে ভালো দাম ও চলতি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় এবার জেলায় বেড়েছে সরিষার চাষ । জেলায় চলতি মৌসুমে কৃষকেরা ৮৬ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর আশানুরূপ দাম পাওয়ায় এবং কৃষি বিভাগ সরিষা চাষে প্রণোদনা দেওয়ায় এবার তারা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এ বছর জেলায় সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামিনুর ইসলাম জানান, এবছর জেলার ৯টি উপজেলায় ৮৬ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যদিও এ বছর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯০ হাজার হেক্টর। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবছর ১ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ বেড়েছে।তিনি আরও বলেন, এ বছর কৃষি কর্মসূচির আওতায় ৮২ হাজার ৬০০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুধু সরিষা চাষেই ৭১ হাজার কৃষকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। উল্লাপাড়া উপজেলার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর ৬ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলাম। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। কৃষি বিভাগ থেকে বীজ ও সার প্রণোদনা দিয়েছে। গত বছর সরিষার ফলন ভালো ছিল, দামও ভালো পেয়েছি।এবার প্রতি বিঘা জমিতে ৬-৭ মণ সরিষা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, গত বছর সরিষার পরে বোরো লাগানোর কারণে ধানের ফলনও ভালো হয়েছিল। রায়গঞ্জ উপজেলার পুল্লা গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, গত বছর ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে বিঘাপ্রতি খবচ হয়েছিল ৬ হাজার টাকা। ফলন পেয়েছিলেন ১৮ মণ। প্রতি মণ তিন হাজার টাকা দরে ৫৪ হাজার টাকা বিক্রি করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, গত বছর সরিষা চাষে আশানুরূপ লাভ হওয়ায় এবার ৪ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আশা করছি এবারও ভালো ফলন ও ভালো দাম পাবো। তাড়াশ উপজেলার মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের কৃষক আবু বক্কার সিদ্দিক বলেন, দাম পাওয়া যায় না বলে সরিষা চাষ ছেড়ে দিয়েছিলাম। গত বছর ৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলাম, দাম ভালো পেয়েছি। তাই এবার ১২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করছি। উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের শুভার গ্রামের আর এক কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, আগে অনেক কৃষক সরিষা চাষ করতেন। আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় তারা চাষ কমিয়ে দিয়েছিলেন। বাজারদর ৩ হাজার টাকার বেশি থাকলে কৃষকেরা সরিষা চাষে আরও বেশি উৎসাহী হবেন বলে মন্তব্য করেন এ কৃষক। সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ. জা. মু. আহসান শহীদ সরকার বলেন, ‘সরিষা ৩ মাস মেয়াদি ফসল। কৃষক কম খরচ ও কম পরিশ্রমে সরিষা চাষ করতে পারেন। বর্তমানে সরিষা চাষ কৃষকের কাছে লাভজনক ফসলে পরিণত হয়েছে। এবার জেলার ৭১ হাজার কৃষককে সরিষা বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। গত বছর সরিষার আশানুরূপ ফলন ও দাম পাওয়ায় কৃষকেরা উৎসাহী হয়েছেন। সরিষা চাষ কৃষির জন্য শুভ বার্তা। সরিষা চাষ একদিকে যেমন মাটির উর্বরতা বাড়ায়; অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।