জীবনের চলার পথে সবাই সমানভাবে স্মরণীয় হয়ে উঠতে পারেন না। তবে কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য, এবং অন্যের প্রতি সদাচরণ একজন ব্যক্তিকে অনন্য করে তুলতে পারে। এমনই এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব হলেন সিরাজুল হক মন্টু, যিনি সাহিত্যিক, সংগঠক, এবং মানবিক গুণাবলীর জন্য বগুড়ার কাহালু, দুপচাঁচিয়া ও আশেপাশের এলাকায় সমাদৃত।
জীবনের প্রাথমিক অধ্যায়
সিরাজুল হক মন্টু বগুড়ার কাহালু উপজেলার শেখাহার মন্ডলপাড়ার মরহুম আলতাফ হোসেন মন্ডল ও জাহানারা বেগমের সন্তান। শিক্ষা জীবনের শুরুতে তিনি শেখাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি এইচএসসি সম্পন্ন করে সরকারি আজিজুল হক কলেজে বাংলা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ইউএনও অফিসে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে আদমদীঘি উপজেলা থেকে চাকরি জীবন শেষ করেন।
সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ও রচনা কর্ম
ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য প্রেমী সিরাজুল হক মন্টু তিনটি উপন্যাস রচনা করেছেন:
শেষ ঠিকানা
খোলা আকাশের নিচে
তোমার অপেক্ষায় থাকবো
উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি গানও রচনা করেছেন। বই পড়ার প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা তাঁকে একজন মননশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত করেছে। তিনি অমীয় ভূষণের “গড় শ্রীখন্ড”, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “পূর্ব পশ্চিম”, হুমায়ূন আহমেদের “বাদশাহ নামদার” ও “জোছনা ও জননীর গল্প”, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “গীতাঞ্জলি”, এবং শরৎচন্দ্রের “দেবদাস”-সহ বহু সাহিত্যকর্ম পড়েছেন।
প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন প্রতিষ্ঠা
সাহিত্য ও জ্ঞানচর্চাকে উৎসাহিত করতে তিনি তাঁর বাবা-মায়ের নামে ‘জাহানারা আলতাফ গ্রন্থাগার’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ গ্রন্থাগারে প্রায় ৩ হাজার বই রয়েছে। এর পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, যেমন:
মধুমতি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
দুপচাঁচিয়া লেখক সংঘ
মাটির মায়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন
শেখাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি
তাঁর উদ্যোগে শেখাহার হাটের মসজিদের দ্বিতীয়তলা এবং শেখাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে।
সহানুভূতি ও সমাজসেবা
সিরাজুল হক মন্টু শুধু সাহিত্যিক নন, তিনি একজন মানবিক সংগঠক। চাকরি জীবনে তিনি অনেক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কোনো অসহায় ব্যক্তি তাঁর কাছে খালি হাতে ফেরেননি। তিনি বলেন,
“বই ছাড়া প্রকৃত মনুষ্যত্ব লাভ করা যায় না। পাঠাগার নৈতিক চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যতদিন বেঁচে থাকবো, অসহায় মানুষের পাশে থেকে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবো।”
সমাজে তাঁর প্রভাব
সাহিত্যচর্চা ও মানবসেবার প্রতি মন্টুভাইয়ের অবদান এলাকার মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। অর্থের পেছনে ছোটার পরিবর্তে জ্ঞানচর্চা ও মানবিকতার মূল্যায়নে তাঁর জীবন সত্যিকার অর্থে অর্থবহ।
সিরাজুল হক মন্টু আজও এক আলোকবর্তিকা, যিনি শুধু নিজের জন্য নয়, বরং সমাজের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।