নীলফামারীর ডিমলায় বুড়ি তিস্তা জলাধার খনন প্রকল্প ঘিরে স্থানীয়দের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। ১২১৭.৬১ একর অধিগ্রহণকৃত জমিতে জলাধার খননের মাধ্যমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এই প্রকল্প ২০২১ সালে একনেকে অনুমোদন পায়। তবে স্থানীয়রা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে দাবি করেছেন, প্রকল্পে উল্লেখিত অধিকাংশ জমি তাদের আবাদি জমি এবং অধিগ্রহণের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।
স্থানীয়দের দাবি ও অবস্থান
স্থানীয়দের দাবি, ষাটের দশকে ব্যারেজ নির্মাণের পর ৫ বছর ধরে তাদের ফসলি জমি ডুবে ছিল। ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছু অর্থ দেওয়া হলেও জমির অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ হয়নি। এখন এই জমিতে ধান, ভূট্টা, আলু, মরিচ, পেঁয়াজসহ বছরে তিন-চারটি ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করছে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার পাঁচটি মৌজার কৃষকরা।
৭৫ বছর বয়সি কুঠিরডাঙ্গা মৌজার কৃষক আব্দুর রউফ বলেন,
"আমাদের জমি আমরা ভোগ করছি। এটি ফসলি জমি, যেখানে বছরে তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন করি। জলাধার খননের জন্য আমাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। প্রকল্পটি বাতিল করা হোক।"
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে তাদের উপর মামলা-মোকদ্দমা ও দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবস্থান
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান জানিয়েছেন,
"এই প্রকল্পটি সরকারের একটি লাভজনক উদ্যোগ, যা বাস্তবায়িত হলে প্রতিবছর ২৬ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন, ১৫ কোটি টাকার জ্বালানি সাশ্রয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব হবে। প্রকল্পের জন্য ১২১৭.৬১ একর জমি ১৯৯২-৯৩ সালে অধিগ্রহণ করা হয়। খননকাজে বাধা দেওয়ায় স্থানীয়দের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, খননকাজে বাধার কারণে প্রকল্পটি প্রায় দেড় বছর ধরে স্থগিত রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয়দের সহযোগিতা প্রয়োজন।
জেলা প্রশাসনের অবস্থান
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন,
"আমরা চাই উভয়পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হোক। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প যেন বাস্তবায়িত হয় এবং স্থানীয় জনগণের ক্ষতিও যেন কম হয়, সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।"
সংঘাত ও মানববন্ধন
প্রকল্প বাতিলের দাবিতে স্থানীয়রা দফায় দফায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে প্রকল্প বন্ধের দাবি জানান তারা। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডও মানববন্ধন করে প্রকল্পে বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
উপসংহার
বুড়ি তিস্তা জলাধার খনন প্রকল্প নিয়ে স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা এবং সরকারের উন্নয়ন উদ্যোগের মধ্যে বিরোধ সৃষ্ট হয়েছে। সুষ্ঠু সমাধানের মাধ্যমে এই প্রকল্পের কার্যক্রম চালু রাখার পাশাপাশি স্থানীয়দের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।