যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ আর মৃত্যুর বিভীষিকা দিয়ে ঘেরা গাজা। এখানকার মানুষের জন্য জীবন যেন প্রতিদিন মৃত্যুর ছায়ায় হেঁটে চলা। এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনায় থেমে গেল হানানের পরিবারের জীবন।
শেষ মুহূর্তের আঘাত:
রোববার (স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায়) যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। আল-কিদরা পরিবার সেই মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষায় ছিল, যেন নিরাপদে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারে। ১৫ মাস ধরে যুদ্ধের মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়ে তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারটি অবশেষে খান ইউনিসের দিকে রওনা দেয়।
কিন্তু যুদ্ধবিরতির সময় পিছিয়ে যাওয়ার কারণে তারা ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্রের শিকার হয়। পরিবারের প্রধান আহমেদ আল-কিদরা তার সন্তানদের নিয়ে গাধার গাড়িতে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তবে নিরাপত্তার আশ্বাস মিথ্যে হয়ে গেল।
মর্মান্তিক মৃত্যু ও পরিবারের বিচ্ছেদ:
একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে তাদের গাড়িতে। আহমেদের বড় ছেলে আদলি (১৬) এবং ছোট ছেলে সামা (৬) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আহত হয় আরও কয়েকজন। আহমেদ নিজেও গুরুতর আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যান।
বেঁচে যাওয়া কন্যা ইয়াসমিন জানায়, তারা একটি উদযাপনকারী গাড়ির পেছনে ছিল, যা মূলত হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে। ইয়াসমিন নিজে ও তার ছোট ভাই-বোনরা কোনোভাবে বেঁচে গেলেও তাদের মন থেকে সেই ভয়াবহ স্মৃতি মুছে যাবে না।
যুদ্ধবিরতির টালবাহানা:
যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় খানিকটা মুক্তির আশা ছিল। কিন্তু ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের জেরে যুদ্ধবিরতি পিছিয়ে যায়। ক্ষণিকের এই দেরি আরও অনেক জীবন কেড়ে নেয়।
গাজার মানবিক বিপর্যয়:
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় গাজা পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৪৭,০৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা ১,১১,০৯১, যার অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এই নিষ্ঠুর বাস্তবতার মধ্য দিয়ে হানানের মতো হাজারো ফিলিস্তিনি পরিবার হারিয়েছে তাদের আপনজন। তাদের জন্য কোনো যুদ্ধবিরতিই আর মুক্তি নিয়ে আসতে পারছে না।