নন্দীগ্রামে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ | Daily Chandni Bazar নন্দীগ্রামে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ০০:৩৯
নন্দীগ্রামে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ
মো: ফজলুর রহমান, নন্দীগ্রাম,বগুড়া

নন্দীগ্রামে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ

 

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত ধান ও সবজি উৎপাদনে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ। এতে যেমন কমছে কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা, তেমনি বাড়ছে উৎপাদন ও কৃষকদের লাভ।

পোকা দমনে নতুন যুগের সূচনা

প্রচলিত কীটনাশক ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ, উপকারী পোকা ধ্বংস ও স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে কৃষকরা এখন ঝুঁকছেন সেক্স ফেরোমন ফাঁদের দিকে।
উপজেলার দাসগ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন,

“উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ইরি-বোরো ধানের ক্ষেতে পার্চিং ও আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে ভালো ফল পাচ্ছি। কীটনাশকের খরচ অনেক কমে গেছে।”

কী এই সেক্স ফেরোমন ফাঁদ?

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান,

“সেক্স ফেরোমন এক ধরনের জৈব রাসায়নিক যা স্ত্রী পোকা নিঃসরণ করে পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করে। এই ভিত্তিতে তৈরি ফাঁদে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে সাবান পানিতে পড়ে মারা যায়, ফলে মিলনের সুযোগ না থাকায় পোকার বংশবিস্তার কমে যায়।”

কীভাবে কাজ করে এই ফাঁদ?

ফাঁদটি সাধারণত একটি প্লাস্টিকের বয়ামে রাখা হয়, যেখানে থাকে সাবান মিশ্রিত পানি এবং ওপরের অংশে ফেরোমনযুক্ত প্লাস্টিক টিউব। এটি জমিতে গাছের উপর ১০-১২ সেন্টিমিটার ওপরে খুঁটির সাহায্যে স্থাপন করা হয়।

এক একর জমিতে প্রয়োজন প্রায় ৪০টি ফাঁদ

এক মাস পরপর ফেরোমন ট্যাবলেট বদলাতে হয়

একটি ফাঁদ ১-২ মৌসুম পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য

ফাঁদের খরচ কম – এক টিউবের দাম মাত্র ৩০ টাকা

বিষমুক্ত ফসল, বাড়তি আয়

নন্দীগ্রাম কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবছর উপজেলায় ১৯,৮৫২ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান এবং ৩৩২ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক জমিতেই পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন, পার্চিং ও আলোক ফাঁদ পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক বলেন,

“আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ফলে কৃষকরা এই প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহী হচ্ছেন। এখন অনেক কৃষক সবজি ও ধান চাষে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছেন।”

কোন ফসলে ব্যবহার হয়?

বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা

মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, লাউ, শসা, চালকুমড়া ইত্যাদির মাছি পোকা

বাঁধাকপি, ফুলকপির ডায়মন্ড ব্যাক মথ

ধানের মাজরা পোকা, কারেন্ট পোকা, ঘাস ফড়িং ইত্যাদি

পরিশেষে

এই প্রযুক্তি কৃষকের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনছে, বাড়াচ্ছে ফলন এবং ফসল হচ্ছে বিষমুক্ত—যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশ উভয়ের জন্যই উপকারী। বিশেষ করে গ্রামীণ চাষিদের জন্য এটি হতে পারে নতুন যুগের চাষাবাদের দরজা।