
রংপুর নগরীর শতবর্ষী শ্যামাসুন্দরী খালটি এখন দখল, দূষণ ও ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নগরবাসীর ফুসফুসখ্যাত এই খালটি বাঁচাতে নতুন করে ১৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে নদী গবেষক ও পরিবেশকর্মীরা বলছেন, সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, পানির প্রবাহ না থাকায় খালজুড়ে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বেড়েছে মশা-মাছির উৎপাত। অনেক এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশনের সংযোগ থাকায় পানি ভয়াবহভাবে দূষিত হয়েছে। খালের দুই পাড়ে অবৈধ দখল ও নির্মাণে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে প্রবাহপথ। নগরবাসীর অভিযোগ, নানা সময় বরাদ্দ এলেও কার্যকর কোনো উন্নয়ন হয়নি।
নগরীর হাজীপাড়া চামড়াপট্টি এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, “২০১৯ সালে খালের উন্নয়নের জন্য আমরা জায়গা ছেড়েছি। কিন্তু আজও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই, বরং অবস্থা আরও খারাপ।”
সেনপাড়া এলাকার হাবিবুর রহমান জানান, “নির্বাচনের আগে আশ্বাস মিললেও পরে আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।”
শ্যামাসুন্দরী খালকে ঘিরে রংপুরে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। ঘাঘট নদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে খালটি হারিয়েছে প্রাকৃতিক স্রোত, ফলে সৃষ্ট হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।
২০২০ ও ২০২১ সালের টানা বর্ষণে রংপুর শহর তলিয়ে গিয়েছিল, যার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয় এই খালের ভরাট ও দখল।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান জানান, “প্রাথমিকভাবে খাল পরিষ্কার ও দুপাশে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানে এগোনো হবে।”
তবে রিভারাইন পিপলের পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, “খালটি রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনকে একত্রে কাজ করতে হবে। ঘাঘট নদ থেকে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা, দখলমুক্ত করা ও বিজ্ঞানসম্মত খনন ছাড়া এ সমস্যার সমাধান হবে না।”
‘সুজন’ রংপুর মহানগরের সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, “এক সময়ের ৬০ ফুট চওড়া খালটি এখন ১০-১৫ ফুটে এসে ঠেকেছে। ২০১৯ সালে ৫১১ জন দখলদার চিহ্নিত হলেও এখন বলা হচ্ছে ১১৭ জন, এই তথ্য বিভ্রান্তিকর।”
১৮৯০ সালে রংপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান জানকী বল্লভ সেন তার মা শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি পুনঃখনন করেন। কেলাবন্দের ঘাঘট নদ থেকে শুরু হয়ে মাহিগঞ্জের মরা ঘাঘট পর্যন্ত বিস্তৃত এই খালটি এখন টিকে থাকার লড়াই করছে।